রাত পোহালেই ক্রিসমাস। বাঙালির বড়দিন। আর বড়দিন মানেই পাতে থাকবে একটুকরো কেক। ফ্রুট হোক প্লেন প্লাম কেক অথবা নিত্যনতুন পেস্ট্রি। কেক ছাড়া বড়দিন বড়ই বেমানান। তাই বড়দিনে কেকের বাজারও থাকে তুঙ্গে। ছোট গলির নাম না জানা ছোট্ট কোনও বেকারি হোক বা শহরের নামজাদা ব্র্যান্ডের কোনও কেক শপ, নতুন বেক করা কেকের মনমাতানো সুগন্ধে মেতে থাকে সারা শহর।
তবে এই `কেক` শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে জানেন? বড়দিনে কেক খাওয়ার চল-ই ভ=বা ঠিক কবে থেকে শুরু? আজ তা-ই জেনে নেও্যা যাক! ইংরেজি অভিধান অনুসারে, কেক কথাটি প্রথম চালু হয় তেরোশো শতকে। প্রাচীন স্ক্যান্ডেনেভিয়ান শব্দ `কাকা` থেকে জন্ম `কেক` শব্দটি। এই `কাকা`র অর্থ রুটি বা পাউরুটি। মূলত পাউরুটির সঙ্গে মধু এবং বাদাম-কিসমিস জাতীয় শুকনো ফল মিশিয়ে তৈরি করা হত সেই কেক। এছাড়াও মধ্যযুগীয় ইউরোপের বেকারিতে ফ্রুটকেক ও জিঞ্জারব্রেড বানানো হতে লাগল।
তবে ফ্রুটকেকের আসল কারিগর কিন্তু রোমানরা। প্রাচীন রোমানরা এক ধরনের মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করতেন। তার নাম ছিল `সাতুরা`। এই সাতুরা তৈরি হত- যবের গুঁড়ো, মধু, ওয়াইন, শুকনো কিসমিস, পাইন এবং ডুমুরের বীজ দিয়ে। স্বাদ ছিল হালকা টক মিস্টি। এই সাতুরা থেকে পরবর্তীতে আসে `প্লাম কেক`। তবে প্লাম কেকের উৎপত্তি হিসাবে আরেকটি গল্পও বেশ প্রচলিত।
বহু আগে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডে ক্রিসমাসের কয়েক সপ্তাহ কাটানো হত কৃচ্ছসাধন এবং উপবাসের মাধ্যমে। ক্রিসমাসের আগের দিন ভাঙা হত সেই উপবাস। আর তা ভাঙত প্লাম পরিজ খেয়ে। এই পরিজে থাকত যবের মন্ড, শুকনো ফল, মধু এবং কখনও সখনও মাংসও। এই পরিজ থেকেই পুডিংয়ের জন্ম হয়।
ষোড়শ শতক নাগাদ পুডিংয়ের রেসিপি থেকে যবের পরিবর্তে আসে গমের ময়দা। তার সঙ্গে যোগ হয় শুকনো ফল, মাখন ও ডিম। তৈরি হত সিদ্ধ প্লাম কেক। সে আমলের অপেক্ষাকৃত ধনী ব্যক্তি, যাদের কাছে ওভেন থাকত, তাঁরা বেক করতেন কেক। সেখান থেকেই জন্ম প্লাম কেকের। আর রাণী ভিক্টোরিয়ার আমলে ইংল্যান্ডে বাড়তে লাগল প্লাম কেকের চাহিদা। তবে শুধু ক্রিসমাসে না, যে কোনও উৎসব বা আনন্দ উদযাপনে অঙ্গ হিসাবেই খাওয়া হত কেক।
তবে উনিশ শতকের শেষদিকে এসে ক্রিসমাস সপ্তাহের দ্বাদশ দিনটির উদযাপন নিষিদ্ধ করলেন রাণী। এদিকে কেক বিক্রেতারা পড়ল মহা ফাঁপড়ে। সেই দিনটির জন্য বানানো কেকগুলি তাই ক্রিসমাসের আগে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিল তারা। ব্যাস! তারপর থেকেই ক্রিসমাসের আগে কেক বিক্রি এবং তা কেনার হিড়িক পড়ে যায় বিশ্ব জুড়ে৷ সেই রীতি চলে আসছে আজও।