কালীপুজোর রাতেই প্রয়াত হলেন বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২২ মিনিট নাগাদ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল। খবর পেয়েই হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের বহু শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীর প্রয়াণে বাংলার রাজনীতির একটি যুগের অবসান হল৷
বজবজের সারেঙ্গাবাদের বাসিন্দা সুব্রত মুখোপাধ্যায় ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবাসী কলেজে পড়াকালীনই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপরই রাজনীতি আঙিনায় পা। বাড়ির কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও কলেজ জীবন থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির আসরে নেমে পড়েন সুব্রত। ১৯৭১ সালে কংগ্রেসের টিকিটে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে বিধায়ক হন তিনি। পরের বছর আবার ওই বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয়বারের জন্য বিধায়ক হন।
[caption id="attachment_38625" align="alignnone" width="1280"] মাত্র ২৫ বছর বয়সেই মন্ত্রী, করেছিলেন অভিনয়ও! জানুন সুব্রত মুখার্জির জীবনের অজানা কাহিনী[/caption]এরপর মাত্র ২৫ বছর বয়সেই সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনিই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী। পেয়েছিলেন তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। ১৯৭৭ সালে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হলে ১৯৮২ সালে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জোড়াবাগান বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। এরপর জিতেও যান। ওই বছর থেকেই ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জোড়াবাগান বিধানসভা কেন্দ্রেরই বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সুব্রত। ১৯৯৬ সালে চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর দ্বিতীয়বারের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গভর্নিং বডিতে মনোনয়ন জমা দিতে চেয়েছিলেন সুব্রত। কিন্তু আইএনটিইউসি রাজি হয়নি। এই ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ হন তৎকালীন কংগ্রেস নেতা।
২০০০ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেসময় রাজ্যে বাম আমল। তবে কলকাতা পৌরনিগম তৃণমূলের দখলে এলে সেখানের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। প্রশাসনিক দক্ষতার নিরিখে কলকাতার ইতিহাসের অন্যতম সেরা মেয়র হিসেবে উল্লেখ করা হয় তাঁকে। পরে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে নিজস্ব ভাবে ‘ঘড়ি’ চিহ্নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সুব্রত। সেই নির্বাচনে জয়লাভও করেন। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে যে মঞ্চ তৈরি করেছিলেন তার পরাজয়ের ফলে আর মেয়র হতে পারেননি। এরপর ২০০৮ সালে সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্না মঞ্চের সময় ফের তৃণমূলের কাছাকাছি আসেন সুব্রত। ২০১০ সালে তৃণমূলে ফের যোগদানও করেন। ২০১১ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সুব্রতবাবুকে মন্ত্রী করা হয়।
[caption id="attachment_38624" align="alignnone" width="1280"] মাত্র ২৫ বছর বয়সেই মন্ত্রী, করেছিলেন অভিনয়ও! জানুন সুব্রত মুখার্জির জীবনের অজানা কাহিনী[/caption]তবে রাজনৈতিক জীবন ছাড়াও সুব্রত মুখোপাধ্যাযয়ের অন্য একটি দিক অনেকেরই অজানা৷ জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অভিনয়ের আঙিনাতেও পা রেখেছিলেন। ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস’ নামের একটি ধারাবাহিকে ছোট পর্দায় অভিনয় করেছিলেন সুব্রত। এই ধারাবাহিকে তাঁর নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন মুনমুন সেন। তৎকালীন দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হত সেই ধারাবাহিক। এইরকম এক বর্ণময় চরিত্রের মৃত্যুতে রাজ্য জুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া।