বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ ভবানীপুরের উপনির্বাচন-সহ রাজ্যের তিন কেন্দ্রের ভোট গণনা চলছে। জঙ্গিপুর এবং সামশেরগঞ্জের সাধারণ নির্বাচনের দিকে নজর যেমন রয়েছে, ঠিক সেই ভাবেই তুলনামুলকভাবে বেশি নজর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুরে। এই লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সম্মানের লড়াই। এই কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিররেওয়াল এবং বাম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস।
এখন পর্যন্ত ১৫ রাউন্ড গণনা শেষে অনেকটাই এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে বিজেপি যখন ভবানীপুরের ৭০ আর ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে আশায় বুক বাঁধছিল, সেখানে তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ ছিল ওই দুই ওয়ার্ডের 'ধারা' বদলে দেওয়া। আর রবিবার, ফলপ্রকাশের দিন দেখা গেল, এই ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপিকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত, এখনও পর্যন্ত ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড ৫৫০০ ভোটে লিড রয়েছে তৃণমূল প্রার্থী মমতার। আবার ৭০ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূল ১ হাজারের বেশি ভোটে লিড নিচ্ছে। প্রবল তৃণমূল ঝড়ের মধ্যেও গত বিধানসভা ভোটে ৭০ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। সেখানে অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা বেশি। ফলে বিজেপির লক্ষ্য ছিল অবাঙালি ভোট যতটা বেশি সম্ভব তাদের দিকে টানা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, এখানেও সহজেই পেরিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। ১৫ রাউন্ড শেষে মমতার প্রাপ্ত ভোট ৫৮ হাজার ৫০৩। আর প্রিয়াঙ্কার ভোট ১৮ হজার ৮৪৬। বাম প্রার্থীর ভোট ২ হাজার ২৬৭। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি প্রার্থীর থেকে ৩৯ হাজার ৬৫৭ ভোটে এগিয়ে। শেষ পাওয়া খবরে, ১৭ রাউন্ড গণনা শেষে ৪৫ হাজার ৭৩৮ বেশি ভোটে এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি মাত্র চার রাউন্ড। মমতা কি নিজের রেকর্ড ভাঙবেন? সেটাই এখন দেখার।
তৃণমূল কংগ্রেস শুরু থেকেই মমতার জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। অপরদিকে বিজেপির দাবি, ‘ভবানীপুরে ভাল লড়াই হবে।’ উল্লেখ্য, একুশের ভোটে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি পদত্যাগ করেন এবং তাঁর জায়গায় ভোটে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর বিপরীতে হারার পরই ভবানীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী তিনি।
আজ সকালেই পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, হাসতে হাসতে জিতবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবধান হবে ৫০ থেকে ৮০ হাজার। এদিন ফিরহাদ হাকিম ট্যুইটারে লিখেছেন, বাংলার প্রতিটি মানুষ যাঁরা সব ওঠাপড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের জন্য এই মুহূর্তটি বিশেষ। ভবানীপুরের মানুষ ২০২৪-এর নেত্রীকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
https://twitter.com/FirhadHakim/status/1444556393776746497মদন মিত্র ট্যুইটারে লিখেছেন, পরজীবীরা কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে পারবেন না। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের গণনা বলছে জনসমর্থন হারাচ্ছে বিজেপি।
https://twitter.com/madanmitraoff/status/1444569111367806977এদিকে, ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে তৃণমূলের বিজয় উৎসব পালন। সল্টলেকের দত্তাবাদে দলনেত্রীর ছবি নিয়ে, আবির খেলে, মিষ্টিমুখ করিয়ে বিজয়োৎসব পালন করছেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা। অন্যদিকে, ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারে তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের উল্লাস। পথচলতি মানুষকেও মাখানো হল আবির। হাততালি দিয়ে জয়ের আনন্দ পালন করেন তৃণমূল কর্মীরা। দলনেত্রীর জয়ের আশায় কালীঘাটে উৎসবে মাতলেন তৃণমূল কর্মীরা। ভবানীপুরের আকাশে উড়ছে সবুজ আবির।
ভবানীপুর-সহ রাজ্যের তিন কেন্দ্রে এগিয়ে তৃণমূল। জেলায় জেলায় উৎসবের ছবি। ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল সিটি বাস স্ট্যান্ডে আবির মেখে উৎসবে মাতলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সদস্যরা। পোড়ানো হয় আতসবাজি। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতাতেও তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের বিজয়োল্লাস। গুঁইয়াদহ গ্রামে সবুজ আবির মেখে, ডিজে বক্স বাজিয়ে চলছে নাচ। পিংলার মাদপুরে তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতির বাড়িতে বিজয়োৎসব পালন করেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা। এলাকায় বিজয় মিছিলও করেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ২৮ হাজারের কিছু বেশি৷ তার মধ্যে এই ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই একুশ হাজারের বেশি ভোটের লিড পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ ইতিমধ্যেই গণনার ফল অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই সেই ব্যবধ্যান পেরিয়ে গেছেন। শেষপর্যন্ত কী দাঁড়ায়? ব্যবধান বাড়বে, নাকি কমবে, নাকি পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথাই সত্যি হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।