বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সংসার ভাঙা ও দ্বিতীয় বিয়ের অভিযোগ পুলিশে! আদালতে আত্মসমর্পণ বিজেপি বিধায়ক চন্দনার

০৩:২৯ পিএম, সেপ্টেম্বর ২, ২০২১

সংসার ভাঙা ও দ্বিতীয় বিয়ের অভিযোগ পুলিশে! আদালতে আত্মসমর্পণ বিজেপি বিধায়ক চন্দনার

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আগেই সংসার ভাঙার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দুবার বিয়ের অভিযোগও দায়ের হয়েছিল। এবার সেই মামলায় বৃহস্পতিবার জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কৃষ্ণ কুণ্ডুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী রুপাদেবী। অভিযোগ করেছিলেন, চন্দনার প্রথম স্বামীও। সূত্রের খবর, এরপর থেকেই গ্রেফতারির আতঙ্কে ভুগছিলেন বিজেপি বিধায়ক।

উল্লেখ্য, চন্দনা এবং তাঁর গাড়ির চালক কৃষ্ণ কুণ্ডুর বিয়ের কথা ১৯ অগস্ট প্রকাশ্যে আসে। এরপরই কৃষ্ণের স্ত্রী রুম্পা কুণ্ডু চন্দনার বিরুদ্ধে গঙ্গাজলঘাটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ চন্দনাদের থানায় ডেকে পাঠায়। সেইসময় তাঁর প্রথম স্বামী চন্দনাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু এই ঘটনার পর একাধিকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন কৃষ্ণ। প্রতিবারই স্বামীর এই অবস্থার জন্য চন্দনাকে দায়ী করেছেন রুম্পাদেবী।

সেই সময় লিখিত অভিযোগে রুম্পাদেবী জানিয়েছিলেন, দলের কাজ নিয়ে চন্দনার সঙ্গে থাকত কৃষ্ণ। এর জেরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এবং গোপনে বিয়ে করেন তাঁরা। চন্দনা এবং নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক অভিযোগ আনেন রুম্পা। সে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিজেপি বিধায়ক এবং কৃষ্ণের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮-এ (বধূ নির্যাতন), ৪৯৪ (বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক), ৪০৬ (বিশ্বাসভঙ্গ) এবং ৫০৬ (হুমকি দেওয়া) নম্বর ধারায় মামলা রুজু করে। এদিন সেই মামলাতেই আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন চন্দনা।

পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ছিল। এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের কোনটাই জামিন অযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন আইনজীবীরা। ফলে এদিন দুপুরেই তিনি জামিন পেয়ে যেতে পারেন বলে খবর।

চন্দনা আত্মসমর্পণ করতেই, এদিন আদালতে হাজির হন বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রী শেখর দানা। তিনি বলেন, ‘এক জন দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির গৃহবধূ বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এটা মেনে নিতে পারছে না অন্যান্য রাজনৈতিক দল। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার করা হয়েছে। কৃষ্ণ কুণ্ডুর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’ আবার বুধবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, চন্দনার মতো একজন প্রান্তিক মহিলার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। চন্দনাকে তৃণমূলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাথা নত করেননি চন্দনা।

চন্দনা অবশ্য এদিন আদালত চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেননি। চন্দনার আইনজীবী লোকেশ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘রুম্পা কুণ্ডু চন্দনা বাউড়ি এবং কৃষ্ণ কুণ্ডুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ চন্দনাকে নোটিস দিয়েছিল। সেই নোটিসের প্রেক্ষিতেই চন্দনা বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

গত ১৯ আগষ্ট ভোরে নিজের গাড়ির চালক কৃষ্ণকে নিয়ে চন্দনা হাজির হন বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানায়। এ বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় রটে যায়, কৃষ্ণকে গোপনে বিয়ে করেছেন শালতোড়ার বিধায়ক। যদিও চন্দনা বাড়িতে ফিরে নেটমাধ্যমে লাইভে এসে জানান, বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। পারিবারিক একটি সমস্যা নিয়ে তিনি থানায় গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছে।

কৃষ্ণের স্ত্রী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, ‘বিধানসভা ভোটের আগে থেকে আমার স্বামী কৃষ্ণ কুন্ডু দলের কাজে চন্দনা বাউড়ির সঙ্গে থাকতেন। চন্দনা বাউড়ি ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেন এবং তাঁর সঙ্গে সব সময় থাকতে বাধ্য করেন। প্রতিবাদ জানাতে গেলে আমার স্বামী আমার উপর শারিরীক নির্যাতন করেন। ১৯ অগষ্ট ভোরে চন্দনার ভাই আমাকে ফোন করে জানায় চন্দনা বাউড়ি এবং আমার স্বামী বিয়ে করেছে’।

এদিকে, কৃষ্ণর কুণ্ডুর কথায়, ‘রাজনীতির স্বার্থে আমার আর চন্দনার মধ্যে ব্যবধান তৈরি করা হচ্ছে। এর জন্য ছাতনার বিধায়ক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার দায়ী। দুর্নীতি করছে ওঁরা। এবার আমি ওঁদের মুখোশ খুলে দেব।’