শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

একুশের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিশেষ অডিও বার্তা

০৫:০০ পিএম, মার্চ ৩০, ২০২১

একুশের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিশেষ অডিও বার্তা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলায় আবার একটা বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বাম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে এক বিশেষ অডিও বার্তা প্রেরণ করেছেন। যা এই মুহূর্তে রাজ্য-রাজনীতিতে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে।

অডিও বার্তায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘রাজ্যে এবারের বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এ এক সন্ধিক্ষণ। বিগত বামফ্রন্টের আমলে আমাদের স্লোগান ছিল- কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। কৃষিতে সাফল্য এসেছিল, শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। হতাশা দেখা দিয়েছে। কৃষিতে সংকট, কৃষকদের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষিজাত দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। শিল্প ও শিল্পায়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গত ১০ বছরে কোনও উল্লেখযোগ্য শিল্পই আসেনি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে শ্মশাণের নীরবতা। গণতন্ত্র আক্রান্ত। মহিলাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত। এই পরিস্থিতি চলতে পারে না।’

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যের তরুণ সম্প্রদায়ের সামনে কোনও আশার আলো নেই। তিনি আরও বলেছেন যে, তৃণমূলের স্বৈরাচারী আচরণ এবং বিজেপির আগ্রসন নীতির কারণে গভীর সংকটের মুখে পড়েছে রাজ্য। তাই বাম-কংগ্রেস-ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির পাশে দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস গড়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এই অডিও বার্তায় তিনি এও আশা প্রকাশ করেছেন যে, বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি জয়ী হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরই বুদ্ধদেবের একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে সিপিএম। তারপরই এল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-এর এই অডিও বার্তা। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় ইচ্ছা থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিগেডে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের সমাবেশে উপস্থিত থাকতে পারেননি বুদ্ধদেব। উপস্থিত থাকতে না পারার সেই ‘অকল্পনীয়’ যন্ত্রণার কথাও এক বার্তাতেই জানিয়েছিলেন তিনি। তারপর নির্বাচন ঘিরে রাজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও, তিনি এতদিন নীরবতা পালন করেই ছিলেন।

কিন্তু সোমবার নন্দীগ্রামে গুলি চলার ঘটনার পিছনে অধিকারী পরিবারের ‘ভূমিকা’ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের পরই, নিজের রাজনৈতিক জীবনের সেই বিতর্কিত অধ্যায় নিয়ে অবশেষে মৌনতা ভাঙেন তিনি। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের জমিরক্ষা আন্দোলনের পিছনে ‘কুটিল চিত্রনাট্য’ কাজ করেছিল বলে এক লিখিত বিবৃতিতে জানান তিনি। তারপর ফের মঙ্গলবার ফের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ টেনেই, মুখ খুললেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

গতকাল প্রেস বিবৃতি দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকারের হাতে গত দশ বছরে কৃষিতে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। রাজ্যে উল্লেখযোগ্য কোনও শিল্প আসেনি এক দশকে। সে সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন বাংলার যুব সমাজ। সরকারি ক্ষেত্রে কোনও নিয়োগ নেই। বাংলার মেধা ও কর্মদক্ষতা যা আমাদের সম্পদ - তা আমাদের রাজ্য ছেড়ে ভিনরাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি বলেন যে, রাজ্যের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতেই হবে। আজ সময় এসেছে, এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর।

উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দুই হোতা আজ রাজনীতির দুই ভিন্ন মেরুতে। তাঁদের মধ্যেই আজ সংঘাত চরমে। আর এই প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙে মুখ খুলেছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই কঠিন সময়ে তাঁর হাতেই ছিল বাংলার দায়িত্বভার। সিঙ্গুরে রতন টাটার সঙ্গে চুক্তি করে গাড়ি কারখানা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নন্দীগ্রামে শুরু হয়েছিল কেমিক্যাল হাবের তোড়জোড়। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের জেরে দু’জায়গাতেই আর শিল্প হয়নি! এই দুই আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হারান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটে বাংলায়। ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই রাজ্যজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন শুভেন্দু অধিকারী।

ফের একটা বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজ্যে। এই নির্বাচনও ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য এবং রাজ্যবাসীর জন্য। আর সেই নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট বহু চর্চিত সেই নন্দীগ্রামে। সেখানে মমতা-শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সংযুক্ত মোর্চার মনোনীত বাম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তার আগে প্রচারের শেষলগ্নে বুদ্ধের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।