মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

না ফেরার দেশে ‘ফেরা’র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

১২:৫২ পিএম, জুন ১০, ২০২১

না ফেরার দেশে ‘ফেরা’র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রয়াত বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। বৃহস্পতিবার ভোরে, সকাল ৬ টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে ঘুমের মধ্যেই জীবনযুদ্ধ শেষ হয় কবি-পরিচালকের। দীর্ঘদিন ঘরেই তিনি কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। চলছিল ডায়ালিসিসও। বিশিষ্ট পরিচালকের মৃত্যুতে চলচ্চিত্রজগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যার পাশাপাশি নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন বছর ৭৭-এর এই বিশিষ্ট পরিচালক। সঙ্গে বার্ধক্যজনিত সমস্যাও ছিল। বৃহস্পতিবারও তাঁর ডায়ালিসিস হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আর প্রয়োজন পড়ল না। বুধবার রাতেই, পরিচালকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ঘরেই ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সোহিনী দাশগুপ্ত ঘুম থেকে ডাকতে যান সকালে। তিনি লক্ষ করেন, পরিচালকের শরীর ঠাণ্ডা। কোনও সাড়া না পেয়ে, আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, তিনি পরিচালকের মৃত্যুসংবাদ জানান। পরিবার সূত্রে খবর, তাঁর দুই মেয়েই মুম্বইয়ে থাকেন। জানা গিয়েছে, আজই প্রয়াত পরিচালকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

১৯৪৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পুরুলিয়ার নিকটবর্তী আনারাতে এক বৈদিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এবং নয়’জন ভাইবোনের পরিবারে তৃতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা তারাকান্ত দাশগুপ্ত ভারতীয় রেলের একজন ডাক্তার ছিলেন, তাই একাধিক জায়গায় ঘুরে শৈশব কেটেছে কবি-পরিচালকের। মাত্র ১২ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন। হাওড়ার দীনবন্ধু স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হয় তাঁর। স্বাধীনতার পর, তাঁর পিতা প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর এবং মানেন্দ্রগড় (এখন ছত্তিশগড়ে) বদলি হন। তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে অধ্যয়ন করেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ শ্যামসুন্দর কলেজে।

এরপর সিনেমা তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির সদস্যপদ গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের তথ্যচিত্র 'The Continent of Love' তৈরির মধ্য দিয়ে পরিচালনায় হাতেখড়ি তাঁর। তারপর একে একে ‘দূরত্ব’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘স্বপ্নের দিন’, ‘তাহাদের কথা’, ‘উড়োজাহাজ’-এর মতো ছবি করেছেন তিনি। তাঁর বহু ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘কালপুরুষ’-সহ একাধিক ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৭৮-এ প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি দূরত্ব পরিচালনা করে জাতীয় পুরস্কারের শিরোপা পেয়েছিলেন তিনি। দেশের বাইরে বিদেশেও একাধিক সম্মান পেয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, এথেন্স আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড, বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-সহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা পেয়েছে তাঁর ছবি। কেবল পরিচালনা নয়, সাহিত্য জগতেও সমানভাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। বছরের পর বছর ধরে তিনি গভীর আড়ালে, কফিন কিম্বা সুটকেস, হিমজগ, ছাতা কাহিনি, রোবটের গান, শ্রেষ্ঠ কবিতা, ভোম্বোলের আশ্চর্য কাহিনি ও অন্যান্য কবিতা-সহ কবিতার বিভিন্ন রচনা প্রকাশ করেছেন।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মৃত্যুতে শোকের ছায়া চলচ্চিত্র জগতে। শোকস্তব্ধ তাঁর চেনা-পরিচিতরা। তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি বলেই জানিয়েছেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। ভাবতে পারছি না। ওঁর আর আমার একসঙ্গে শুরু। আমাকে জোর করে অভিনয় করিয়েছিল। অনেক স্মৃতি ওঁর সঙ্গে। সবটাই সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার গল্প ‘দূরত্ব’ দিয়েই ওঁর চলচ্চিত্র অভিযান শুরু হয়। ওঁকে আমি কবি হিসেবেই চিনতাম। খুব ভাল কবিতা লিখত। খুব শক্তিমান কবি ছিল। আমি খুবই স্নেহ করতাম। কয়েক বছর আগে দেখা হয়েছিল। শরীর ভাল ছিল না।’

পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত’র প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’ শোকবার্তায় লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

https://twitter.com/MamataOfficial/status/1402848426564280320

শোকপ্রকাশ করে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তাঁর ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘শ্রী বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মৃত্যুতে আমি শোকাহত। ওঁর কাজ সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের কথা বলত। এক প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী এবং কবিও ছিলেন উনি। ওঁর পরিবার এবং অগুনিত গুণগ্রাহীর প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি।’

https://twitter.com/narendramodi/status/1402864065253232641