শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মালদায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম তুলতে গিয়ে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, হাতাহাতি! অসুস্থ ৮

০৮:০২ পিএম, আগস্ট ১৬, ২০২১

মালদায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম তুলতে গিয়ে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, হাতাহাতি! অসুস্থ ৮

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ফর্ম তোলার প্রথম দিনই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার মুখে মালদাবাসী। নির্বাচনের আগেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মালদার হরিশচন্দ্রপুরের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হল প্রকল্পের ফর্ম দেওয়ার কাজ। আর তা কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। শুরু হয় মারামারি, হাতাহাতি। ফর্ম ছিনতাইয়ের অভিযোগও ওঠে। ঘটনার জেরে মহিলা সহ ৮ অসুস্থ বাসিন্দাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লকের সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হাসিনা হাইস্কুলে শুরু হয় দুয়ারে সরকারের অন্তর্ভুক্ত 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পের কাজ। সেখানেই সুলতান নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ। সৃষ্টি হয় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার। অভিযোগ, প্রকল্প শুরু হওয়ার পরেই একদল দুষ্কৃতী এসে ফর্ম লুটপাট করে নিয়ে চলে যায়। এদিকে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম না পেয়ে ঘুরে চলে যান বহু সাধারণ মানুষ। তারপরই শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি, মারামারি। শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যদের দিকেফর্ম লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মহিলা সহ ৮ বাসিন্দা। তাঁরা আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনা প্রসঙ্গে পার্শ্ববর্তী ছত্রক গ্রাম থেকে ফর্ম নিতে আসা করুণা শর্মা বলেন, "লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম তুলতে এসেছিলাম। কিন্তু পেলাম না। ফর্ম চুরি হয়ে গিয়েছে। কারা করেছে বুঝতে পারছি না। আমরা ফর্ম চাই।" ফর্ম নিতে আসা আরেক স্থানীয় বাসিন্দা নারিজা খাতুন বলেন, "দুয়ারে সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে এসেছিলাম। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও ফর্ম পেলাম না। ফর্ম চুরি হয়ে গিয়েছে। মারামারিও লেগে গিয়েছিল। আমাদের বলা হয়েছে ফর্ম শেষ।"

অন্যদিকে, ঝামেলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সুলতান নগরের তৃণমূল নেতা মালদা জেলার সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান। হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লকের বিডিও বিজয় গিরিও আসেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় হরিশচন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের নেতৃত্বাধীন বিশাল পুলিশবাহিনীও। পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে, ফর্ম লুটপাট যাওয়ার বা ফর্ম না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রশাসন এবং শাসক দল। তাদের মতে, প্রথম দিনের ভীড়ের ফলেই এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে তা ঠিক হয়ে গিয়েছে। ফর্ম দেওয়া এবং জমা নেওয়া দুটো কাজই স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে।

হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লকের বিডিও বিজয় গিরি জানিয়েছেন, "প্রথম দিনেই মারাত্মক ভিড় হওয়াতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। তবে সেটা সামলে নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে প্রায় ৫০ হাজার ফর্ম রয়েছে। সকলেই পাবেন। ফর্ম চুরি হয়নি। ২০ টা কাউন্টার থেকেই দেওয়া হচ্ছে।" একই সুরে সুর মেলান তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খানও। তিনি বলেন, "প্রথম দিনেই প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের ভিড় হয়েছে । এতটা ভিড় হলে একটু বিশৃঙ্খলা হবেই। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা সামলেছি। ফর্ম চুরি হয়নি। সকলেই পাবেন।"

যদিও এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা কিষান কেডিয়া ঘটনার সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, "তৃণমূল সরকার সব কিছুতে ব্যর্থ । এগুলো কোনও প্রকল্প না গরিব মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা? যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বিধিনিষেধের সময় বাড়িয়েছেন, নাইট কার্ফিউ চলছে; সেখানে কিভাবে এত ভীড় এবং বিশৃঙ্খলা হয় কীভাবে?" উল্লেখ্য, এদিন সাধারণ মানুষের বিশাল পরিমাণ ভীড়ের ফলে শিকেয় উঠে স্বাস্থ্যবিধি। বহু মানুষের মুখে ছিল না মাস্ক। সামাজিক দূরত্বের ছিল না কোনো বালাই। যে সময় তৃতীয় ঢেউ দরজায় কড়া নাড়ছে, সে সময় সরকারি প্রকল্পের কাজে এই ধরনের অসচেতনতার ছবি প্রশাসনিক ব্যর্থতারই পরিচয় দিয়েছে।