বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

এবার টিকাকরণে অগ্রাধিকার ব্যাংক কর্মীদের, সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের

০৭:০৪ পিএম, মে ২১, ২০২১

এবার টিকাকরণে অগ্রাধিকার ব্যাংক কর্মীদের, সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ভার্চুয়াল বৈঠকে হাজির ছিলেন বেশকিছু রাজ্যের জেলাশাসকেরাও। ভার্চুয়ালি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিনই একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হওয়ার ভার্চুয়াল বৈঠক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, ‘আমাদের কাউকে বলতে দেয়নি।’ মুখ্যমন্ত্রী বৈঠককে ‘ক্যাজুয়াল। সুপারফ্লপ মিটিং’ বলে আখ্যা দেন।

এরপরই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের টিকাকরণে জোর দেওয়ার আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কেন্দ্রের কাছে ২০ লক্ষ ডোজ করোনা টিকা পাঠানোর আর্জিও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এর ঠিক পরের দিনই, শুক্রবার অর্থাৎ আজ, রাজ্যের ব্যাংক কর্মীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। স্বাভাবিক কারণেই মমতার এই সিদ্ধান্তে মুগ্ধ রাজ্যের ব্যাঙ্ককর্মীরাও। উল্লেখ্য, রাজ্যব্যাপী কার্যত লকডাউন চললেও ছুটি নেই ব্যাঙ্ককর্মীদের। গতবছরও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেদের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। আর নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গিয়েছে বহু ব্যাংক অফিসার ও কর্মীদের। তাই এবার টিকাকরণের ক্ষেত্রে নিজেদের ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার দাবি করে টিকাকরণে অগ্রাধিকার দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। সেই আবেদনেই সাড়া দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা সহ জেলায়-জেলায় ব্যাংক কর্মীদের টিকাকরণের কাজ খুব দ্রুত চালু হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সেই কারণে মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন (AIBOC)।

সম্প্রতি সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য সচিবকে ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থায় কর্মরতদের অবিলম্বে টিকা দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব দেবাশিস পান্ডা। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থা, পেটিএম সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জরুরিভিত্তিতে টিকা দিতে হবে। এরপর মমতার কাছেও দ্রুত ব্যাঙ্ককর্মীদের টিকাকরণের আর্জি জানায় অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন। এবার সেই আবেদনে সাড়া মিলল। তাই স্বভাবতই খুশি ব্যাংক কর্মীরা।

মুখ্যমন্ত্রী গতকালই জানিয়েছেন যে, জরুরি পরিষেবা জারি রাখতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন ওঁরা। নিজেদের জীবনের বাজি রেখে, আমজনতার সংস্পর্শে এসে পরিষেবা দিচ্ছেন। অথচ তাঁদের করোনার টিকা দেওয়ার বা তাঁদের টিকাকরণের কোনও পরিকল্পনা করেনি কেন্দ্র সরকার। তাই সেই সমস্ত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের অবিলম্বে টিকাকরণের উপর জোর এবং গুরুত্ব আরোপ করার আর্জি জানিয়েছেন চিঠিতে, গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুধু রাজ্য সরকারি কর্মচারী নয়, মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে রেল, বিমানবন্দর, বন্দর, প্রতিরক্ষা, ব্যাংক, বিমা, ডাক, কয়লা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি বিভাগের কথাও উল্লেখ্য করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এই বিভাগগুলির বহু কর্মী নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ম সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসে পরিষেবা অব্যাহত রাখছেন। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে, তাঁদের দ্রুত টিকা দেওয়ার প্রয়োজন।

রাজ্যে গণটিকাকণের প্রারম্ভে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং কোভিড যোদ্ধাদের। এর পর গত সপ্তাহেই নতুন করে দৈনন্দিন জনজীবনে যুক্ত থাকা বিভিন্ন পেশার কর্মীদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় সব্জি, মাছ, মুদিখানা-সহ অত্যাবশকীয় পণ্যের ব্যবসায়ী ও অন্যান্য কর্মী, রেশন ডিলার, গ্যাস বণ্টন সংস্থা ও পেট্রোল পাম্পের কর্মী, হকার, ট্যাক্সি-অটো-টোটোচালক-সহ পরিবহণ কর্মী, সরকারি-বেসরকারি হোমের আবাসিক ও কর্মী, সাংবাদিকদের। পাশাপাশি অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছেন, ভোট প্রক্রিয়ার সময় টিকা না নিতে পারা শিক্ষক-সহ বিভিন্ন আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও। এ বার সেই তালিকাতেই চলে এলেন ব্যাংক কর্মীরাও।