বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে হেঁটে ১২ কিমি পাড়ি দিয়েছিলেন দানা মাঝি! মাধ্যমিকে সফল ভাবে উত্তীর্ণ তাঁর মেয়ে চাঁদনি

০১:০৩ পিএম, জুন ২৭, ২০২১

স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে হেঁটে ১২ কিমি পাড়ি দিয়েছিলেন দানা মাঝি! মাধ্যমিকে সফল ভাবে উত্তীর্ণ তাঁর মেয়ে চাঁদনি

২০১৬ সালের অগস্ট মাস। গোটা দেশের নজর কেড়েছিল একটি দৃশ্য। স্ত্রীর মৃতদেহ চাদরে মুড়ে তা কাঁধে নিয়ে ১২ কিমি পথ পাড়ি দিতে দেখা গিয়েছিল অসহায় এক স্বামীকে। পুরোটা পায়ে হেঁটেই। জানা গিয়েছিল, ওই ব্যক্তির নাম দানা মাঝি। ওড়িশার কালাহান্দির বাসিন্দা। যক্ষ্মার কারণে স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ায় হাসপাতাল থেকে গাড়ি না পেয়ে মৃতদেহ কাঁধে চাপিয়ে পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। পাশে ছিল তাঁর কিশোরী কন্যাও। সেই কন্যার হাত ধরেই এবার পরিবারে এল সাফল্য৷ মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরোলো দানা মাঝির মেয়ে চাঁদনি।

জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সফল ভাবে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে ভুবনেশ্বরের আবাসিক স্কুল কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর ছাত্রী চাঁদনি। তবে এর পিছনে যার বিপুল অবদান রয়েছে তিনি হলেন কেআইএসএসের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর অচ্যুত সামন্ত। বছর পাঁচেক আগে দানা মাঝির অসহায়তার কথা জানতে পেরেই তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ড. সামন্ত। দানা মাঝির তিন মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে তাদের ভর্তি করেন নিজের স্কুলে। পাশাপাশি তাদের খাওয়া-পরারও ভার নেন। তাঁর সহায়তাতেই সাফল্যের সঙ্গে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার বেড়া সফল ভাবে পেরিয়ে গেল চাঁদনি।

যদিও চাঁদনির সাফল্যের পুরো কৃতিত্বই স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের কাঁধে তুলে দিলেন ড. সামন্ত। একইসঙ্গে চাঁদনি প্রসঙ্গে তিনি জানান, "বোর্ডের পরীক্ষায় এত ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য চাঁদনিকে শুভেচ্ছা জানাই। জীবনের প্রত্যেকটা ধাপ যেন এরকম সাফল্যের সঙ্গেই পেরিয়ে যায় সে এটাই চাইবো।" পাশাপাশি তাঁর স্কুল থেকে পাশ করা অন্যান্য মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদেরও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তাদের নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায়কে তুলে ধরেছেন স্কুলের প্রাণপুরুষ ডাক্তার অচ্যুত সামন্ত।

প্রসঙ্গত, ৫ বছর আগের ওই ঘটনার পর দানা মাঝির জীবন এখন পুরোটাই বদলে গিয়েছে। ঘটনার পর প্রচুর মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন তাঁর দিকে। বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তাও পেয়েছিলেন। বাহরিনের প্রধানমন্ত্রীও ৯ লক্ষ টাকা সাহায্য করেন। নতুন করে বিয়ে করেন দানা মাঝি, ফের বাবাও হন। তবে চাঁদনির কৃতিত্বে যাহাপরনাই উচ্ছ্বসিত তিনি। মেয়ের সাফল্য ছুঁয়ে গিয়েছে বাবাকেও। তাই নিজেই জানালেন, মেয়ে যতদূর পড়তে চায় ততদূর পড়াতে রাজি তিনি। পাশাপাশি তাঁদের দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য ড. সামন্তকে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি তিনি।