শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

শিল্পপতি কন্যা রসিকা আগরওয়াল জৈনের রহস্যমৃত্যু! খুন না আত্মহত্যা? তদন্তে গোয়েন্দারা

০৫:১৯ পিএম, মার্চ ৩, ২০২১

শিল্পপতি কন্যা রসিকা আগরওয়াল জৈনের রহস্যমৃত্যু! খুন না আত্মহত্যা? তদন্তে গোয়েন্দারা

বংনিউজ২৪x৭ডিজিটাল ডেস্কঃ কলকাতা শহরের দুই সফল শিল্পপতি পরিবারের মধ্যে ২০১৯ সালে গড়ে ওঠে বৈবাহিক সম্পর্ক। সব ঠিকই চলছিল, কিন্তু সব ঠিক থাকার মেয়াদ যে এতো কম হবে, তা বুঝে উঠতে পারেননি মেয়ের পরিবার। বছর ঘুরতেই নেমে এল বড় বিপর্যয়। রহস্যমৃত্যু রসিকা আগরওয়াল জৈনের। জানা গিয়েছে, উপর থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে রসিকা আগরওয়াল জৈনের। এই মুহূর্তে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত শুরু হয়েছে।

আলিপুরের রাজা সন্তোষ রোডের নামকরা ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে রসিকা ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, বিদেশে থেকে ডিগ্রিও নিয়ে এসেছেন। ২০১৯ সালে দেখাশোনা করেই, বিয়ে হয়েছিল তাঁর। পাত্র আলিপুর অঞ্চলেরই ডিএলখান রোড এলাকার আর এক নাম করা ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে কুশল আগরওয়াল। ২০২০ সালে রসিকা এবং কুশলের ঘটা করে এক বছরের বিবাহবার্ষিকীও পালন করা হয়।

এর ঠিক পরেই, দেশজুড়ে লকডাউনের খাঁড়া নেমে আসে। লকডাউনে ঘরবন্দি অবস্থায় দৈনন্দিন জীবনে রসিকার সুখী দাম্পত্য সম্পর্কের ঘোর ভাঙে, বেরিয়ে আসে আসল চেহারা। স্বামী মাদকাশক্ত বলে অনুমান করেন রসিকা। পরবর্তীতে তাঁর সেই অভিযোগও আরও দৃঢ় হল। এছাড়াও আরও নানা কারণে অশান্তি এবং স্বামীর মাদক নেওয়ার প্রতিবাদ করায়, তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয়। রসিকাকে তাঁর বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেওয়া হতো বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে শ্বশুরবাড়িতে তাঁর মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছিল, এমন অভিযোগ অনেকবারই নিজের পরিবারের কাছে জানিয়েছিলেন শিক্ষিতা, সুন্দরী রসিকা।

পরিস্থিতি এতোটাই জটিল হয়ে উঠছিল রসিকার চারপাশের যে, টাকার জন্য নিজের ভাইয়ের কাছে হাত পাততে পিছপা হননি তিনি। এমনকি খাদ্য সরবারহকারী সংস্থা থেকে শ্বশুরবাড়িতে খাবারও পাঠিয়ে দিতেও বলতেন নিজের ভাইকে। এ প্রসঙ্গে রসিকার ভাই ঋষভ জৈন জানিয়েছেন যে, তাঁর দিদি তাঁকে ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা ভরে দিতে বলতেন। খাবারও পাঠাতে বলতেন। ঋষভ আরও জানিয়েছেন, রসিকার শ্বশুরবাড়িতে খুব চিৎকার-চেঁচামেচি হতো। শ্বশুরবাড়িতে তাঁর দিদিকে টাকাপয়সা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এসবের কারণেই কি রসিকার এমন পরিণতি! শ্বশুরবাড়িতে ছাদের নীচে তাঁর দেহ পাওয়া যায়, ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, উঁচু থেকে পড়ার কারণেই এই মৃত্যু। এখন প্রশ্ন, তিনি নিজেই কি অসাবধানতার কারণে পড়ে গিয়েছিলেন? অশান্তি এবং অত্যাচারের জেরে আত্মহত্যা করেছেন? নাকি কেউ তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে চাইছেন গোয়েন্দারা।

এদিকে এই ঘটনায় পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠছে। কারণ, ১৭ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ ঘটনার পরের দিন রসিকার পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ করা হয়। এর পরে, দু'জন পুলিশ আধিকারিক এসে, রসিকার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর থেকে আরও কোনও পদক্ষেপ পুলিশের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি।

এইসব প্রশ্নের উত্তরের খোঁজের রসিকার পরিবারও। তাঁর পরিবারের দাবি, প্রভাব খাটিয়ে রসিকার মৃত্যুর আসল কারণ ধামাচাপা দিতে চাইছে তাঁর শ্বশুরবাড়ির পরিবার। মেয়ের মৃত্যুতে যে রহস্য আছে, সে সম্পর্কে তাঁদের কোনও সন্দেহ নেই। তার কারণ, মৃত্যুর আগেও রসিকা তাঁর বাবাকে যে হোয়াটসঅ্যাপ করেন সেখানে তাঁর শ্বশুরবাড়ির বেশ কয়েকজনের বিষয়ে ছিল বেশ কিছু অভিযোগ। এছাড়া রসিকার ভাইয়ের অভিজ্ঞতাও যথেষ্টই তিক্ত।

অন্যদিকে, মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে জেনেও, কেন তাঁরা চুপ করে ছিলেন সে প্রশ্নও উঠছে রসিকার মৃত্যুর পর। জানা গিয়েছে, বাড়ির এমন একটা খবর প্রকাশিত হলে, তাঁদের সামাজিক বা পারিবারিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এমনটা মনে করে, তাঁরা চেয়েছিলেন লোক জানাজানি না করেই, নিজেদের মধ্যে সবকিছু মিটিয়ে নিতে। কিন্তু এই চুপ করে থাকা কাল হয়ে দেখা দিল। সময় পাওয়া গেল না সব মিটিয়ে নেওয়ার।