শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি

০৬:৫৩ পিএম, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১

বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি

সুব্রত ঘোষ: কলকাতায় এবং কলকাতার বাইরেও সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য জমিদার বাড়ি এবং বনেদি বাড়ি। সেসব বাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে সাধারণের মধ্যে অনেক কৌতূহলও আছে। সেই সূত্রেই আমার লেখার মধ্যে দিয়ে তুলে ধরছি কয়েকটি বিশেষ বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।

[caption id="attachment_33525" align="aligncenter" width="1280"]বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি[/caption]

প্রথমে বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা। কলকাতার কলুটোলা অঞ্চলে অপরিসর গলির মধ্যে যে এমন একটি অসাধারণ সুন্দর বাড়ি লুকিয়ে থাকতে পারে - তা সেখানে না গেলে বিশ্বাসই করা যায় না। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী বাড়ির তালিকায় থাকা এই বাড়িটি স্থাপত্য বৈচিত্রে একটু অন্যরকম। অন্য বহু বনেদি বাড়িতে দেখা যায় মূল ঠাকুর দালানের সামনে প্রশস্ত উঠোন, আর সেই উঠোনকে তিনদিক থেকে ঘিরে বসত বাড়ির বিভিন্ন অংশ। এখানেও মূল গঠনটি সেইরকম হলেও - বৈশিষ্ট আছে সামনের উঠোনটিতেই। উঠোনের মধ্যেই চারপাশে রেলিং দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে আর একটি উঠোন। সেই রেলিঙের মাঝে মাঝেই আছে ছোট ছোট সাদা রঙের থাম - তাদের ওপরের অংশগুলি লাল রঙ করা। আবার তারও ওপরে ঢালাই লোহার অলঙ্করণ যুক্ত আলোকস্তম্ভ। এখানে আগে গ্যাসের আলো জ্বলত। এখনও পুজোর সময় জ্বলে ওঠে সাবেক গোল আলোর সারি। মূল উঠোনের মধ্যে এই ঘেরা উঠোনটির মেঝে দাবার ছকের মত সাদা কালো খোপে ভাগ করা।উঠোনের এক পাশে কিছু পাখির খাঁচা, ছোট হাতীর মূর্তি আর চার পাশে আলো হাতে রুপোলী রঙ করা চারটি নারী মূর্তি। মূল প্রবেশ পথ দিয়ে বাড়ি তে ঢুকে উঠোনের দিকে যাওয়ার অলিন্দের দুপাশে শ্বেত পাথরের দুটি হাতির মূর্তি। উঠোনের এই ধরণের সুন্দর বৈচিত্রময় স্থাপত্যই এই বাড়ি টিকে এক অসাধারণ সৌন্দর্য এনে দিয়েছে।

[caption id="attachment_33521" align="aligncenter" width="1280"]বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি[/caption]

এবারে আসি এঁদের পূজোর কথায়। এখানে ঠাকুর দালান পাঁচটি খিলান বিশিষ্ট। সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথমে মূল দালান, তার পরে ভিতরে আরেকটি দালানের পরে গর্ভগৃহ - যেখানে দেবী পূজিতা হন। এঁদের দুর্গা পুজো কিন্তু বহু পুরনো - যদিও তা শুরুর সঠিক তারিখ পাওয়া যায় না।আনুমানিক ১৮৫৭ সাল নাগাদ কলুটোলা অঞ্চলে এই বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন বদন চন্দ্র রায়, যদিও এই পরিবারের পুজোর সূচনা কিন্তু আরও অনেক আগে, যদিও সেই পুজো তখন হতো অন্যত্র।

[caption id="attachment_33523" align="aligncenter" width="1280"]বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো - বদন চন্দ্র রায়ের বাড়ি[/caption]

এবারে পুজোর আরো কিছু খুঁটিনাটি। উল্টোরথের দিনে এখানে হয় কাঠামো পুজো। আর বোধন হয় মহালয়ার পরের দিন শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে । একচালার প্রতিমা, সাবেক বাংলা রীতির সেই প্রতিমার গায়ে শোভা পায় রুপোলি ডাকের সাজ। সিংহের গায়ের রং রুপোলি। দুর্গা, লক্ষ্মী আর কার্তিকের রঙ কাঁচা হলুদ বর্ণ , সরস্বতী সাদা আর গণেশের শরীর লাল আর মুখ সাদা।এখানে প্রতি দিন নৈবেদ্যে থাকে ফল চাল ও মিষ্টি। ভোগে থাকে লুচি, কচুরি, নানা ধরনের নিরামিষ তরকারি, যেমন ছানার কালিয়া, পটলের দোলমা ইত্যাদি। সন্ধিপুজোয় জ্বালানো হয় ১০৮টি প্রদীপ, বিশেষ নৈবেদ্য থাকে চাল ও চিনির। দেড়শ বছরেরও বেশী সময় ধরে এই পূজা একই ভাবে চলে আসছে এই বাড়িতে। ব্যতিক্রম ছিল শুধু এক বছর। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় এক বছর দেবী পূজিত হয়েছিলেন অন্যত্র - জোড়াসাঁকোর এক শরিক বাড়িতে। কিন্তু পরের বছর থেকেই আবার এখানেই পূজো হচ্ছে নিষ্ঠা ভরে - সেই প্রথম যুগের নিয়ম যথাসম্ভব বজায় রেখেই।

২০১৭ আর ২০১৯ এর পুজোর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখিত ছবিঃ সুব্রত ঘোষ লেখাঃ সুব্রত ঘোষ