শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

একমাসেরও বেশি সময়ের লড়াই শেষ! প্রয়াত জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী তথা অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২, ১১:৩৩ এএম | আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২, ০৫:৩৯ পিএম

একমাসেরও বেশি সময়ের লড়াই শেষ! প্রয়াত জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী তথা অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব
একমাসেরও বেশি সময়ের লড়াই শেষ! প্রয়াত জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী তথা অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জেতা হল না তাঁর। মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি অগণিত দর্শকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলত। সেই তিনিই দেড় মাসের লড়াইয়ে হার মানলেন মৃত্যুর কাছে। মাত্র ৫৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন কৌতুকশিল্পী তথা অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব।

গত আগস্ট মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই দিল্লির এইমসে ভরতি ছিলেন তিনি। সেখানেই বুধবার সকালে প্রয়াত হন তিনি। তাঁর পরিবার, বন্ধু-সহকর্মী এবং অগণিত অনুরাগীর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তিনি মৃত্যুকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু তেমনটা হল না। গত আগস্ট মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন রাজু শ্রীবাস্তব। তারপর থেকেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি।

গত ১০ অগস্ট বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কৌতুকশিল্পী। অবস্থার অবনতি হলেও পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন। তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ভেন্টিলেশনে ছিলেন রাজু। গত আগস্টে দিল্লিতে একটি বিশেষ কাজে দিল্লি গিয়েছিলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে হোটেলের জিমে যান। এক্সারসাইজ করতে করতেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রাজু শ্রীবাস্তব। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের কথায়, জিম করার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন রাজু। তিনি কোমাতে চলে যান। মাঝে কোমা থেকে ফিরলেও, বাড়ি ফেরা হল না তাঁর। হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী।

১৯৬৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর কানপুরে জন্ম হয় রাজু শ্রীবাস্তবের। বাবা রমেশচন্দ্র শ্রীবাস্তব ছিলেন কানপুরের প্রখ্যাত কবি। ছেলের নাম তিনি রেখেছিলেন সত্যপ্রকাশ শ্রীবাস্তব। কিন্তু রাজু নামেই সকলে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই রাজু শ্রীবাস্ত চেনা-মানুষজনের নকল করতে পারতেন। যে কোনও উপায়ে খুব সহজেই মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারতেন। কৌতুকশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন রাজু। তাঁর কৌতুক শিল্পের বেশ কদর ছিল কানপুরে। অনেকেই কারণে-অকারণে তাঁকে ডেকে নিতেন। এক সময় কানপুরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রাজু। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল অন্য। তিনি বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিলেন।

বলিউডের টানেই মায়ানগরী মুম্বইয়ে পাড়ি দেন রাজু, আটের দশকের শুরুতে। প্রথমেই তিনি সিনেমায় সুযোগ পাননি। ১৯৮৮ সালে ‘তেজাব’ সিনেমায় ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ সিনেমাতেও ছিলেন। তারপর থেকে একাধিক সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন রাজু। তবে, মঞ্চে তাঁর কেরামতি কিন্তু ছিলই। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’ শোয়ের রানার-আপ ছিলেন রাজু শ্রীবাস্তব। চ্যাম্পিয়ন না হলেও, তাঁর হাস্যরসের খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ-চ্যাম্পিয়নস’ শোয়ে ‘দ্য কিং অফ কমেডি’র খেতাব পেয়েছিলেন। তাঁর ‘গজোদর ভাইয়া’ চরিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়।

সম্প্রতি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজু। প্রথমে সমাজবাদী পার্টি তাঁকে ভোটে লড়ার টিকিট দিয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি তা ফেরত দিয়ে দেন। পরবর্তীকালে বিজেপিতে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের অঙ্গ ছিলেন তিনি।

হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর, প্রথম দিকে অবস্থার অবনতি হলেও প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে থাকার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি। জ্ঞান ফিরেছিল তাঁর। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর আবার শিল্পীর শারীরিক অবনতি হতে থাকে। এইমস সূত্রে খবর, হৃদরোগের চিকিৎসাধীন রাজুর হঠাৎই জ্বর আসতে শুরু করে। ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখেন চিকিৎসকেরা। গত ২০ দিন সেভাবেই চিকিৎসা চলছিল কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তবের। বুধবার সকালে আর সঙ্গ দেয়নি তাঁর শরীর। হার মানলেন তিনি, চলে গেলেন না ফেরার দেশে।