শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

মুখাগ্নি করলেন ছেলে, পঞ্চভূতে বিলীন কেকে-এর নশ্বর দেহ! চোখের জলে শেষ বিদায় প্রিয় শিল্পীকে

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২, ০৪:৩০ পিএম | আপডেট: জুন ২, ২০২২, ১০:৩০ পিএম

মুখাগ্নি করলেন ছেলে, পঞ্চভূতে বিলীন কেকে-এর নশ্বর দেহ! চোখের জলে শেষ বিদায় প্রিয় শিল্পীকে
মুখাগ্নি করলেন ছেলে, পঞ্চভূতে বিলীন কেকে-এর নশ্বর দেহ! চোখের জলে শেষ বিদায় প্রিয় শিল্পীকে

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কেকে-এর প্রয়াণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে এক সুরেলা অধ্যায়ের। বুধবার রাতেই কলকাতা থেকে তাঁর নশ্বর দেহ মুম্বই নিয়ে আসে তাঁর পরিবার। কেকে-এর কফিনবিন্দি দেহ নিয়ে রাত ৯ টা নাগাদ মুম্বই পৌঁছায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আজ কিছুক্ষণ আগেই শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। মুখাগ্নি করলেন ছেলে নকুল। পঞ্চভূতে বিলীন হলেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কেকে। 

প্রয়াত শিল্পীর শেষ দর্শনের আয়োজন করা হয়েছিল আজ সকাল ১০.৩০ থেকে ১২.৩০ টা পর্যন্ত। ভার্সোভা আন্ধেরির পার্ক প্লাজায় শায়িত ছিল তাঁর মরদেহ। এরপর শিল্পীর নশ্বর দেহ শ্মশানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কেকে-এর। এদিন কেকে-এর শেষকৃত্যে ছিল উপচে পড়া ভিড়। চোখের জলে দীর্ঘ ৩০ বছরের দাম্পত্যজীবনের সঙ্গীকে বিদায় জানালেন স্ত্রী জ্যোতি। বাবা ও প্রিয় মানুষকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন ছেলে নকুল কৃষ্ণ কুন্নাথ, মেয়ে তামারা কৃষ্ণ কুন্নাথ। ছিলেন গায়কের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। 

এদিন দীর্ঘদিনের বন্ধু ও প্রেমিক তথা পরবর্তীকালে দীর্ঘ কয়েকবছরের দাম্পত্য সঙ্গীর চিতার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী জ্যোতি। কেকে-এর এই অকাল প্রয়াণ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁর বন্ধু, পরিবার, সহকর্মী এবং অগণিত অনুরাগী। তবুও উপায় নেই। বিদায় তো জানাতেই হয়। এদিন প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের জন্য দেখতে ভারসোভা মহাশ্মাশানে শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত। 

এদিন সকালে প্রিয় গায়ক, বন্ধু এবং সহকর্মীকে শেষ বিদায় জানাতে কেকের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল, হরিহরণ, অভিজিৎ, আকৃতি কক্কর, সেলিম মার্চেন্ট, রাঘব সাচার, সুদেশ ভোঁসলে, অলকা ইয়াগনিক, জাভেদ আলি, জাভেদ আখতার, শঙ্কর মহাদেবন, বিশাল ভরদ্বাজ, রেখা ভরদ্বাজ,পাপন প্রমুখ সঙ্গীতজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। এদিন শ্মশানের বাইরে কেকে-এর গানেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর ভক্তরা। বাবাকে শেষ বিদায় জানানোর আগে মেয়ে তামারা কেকে-এর শেষকৃত্যের আমন্ত্রণ পত্র নিজের ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করে লেখেন ‘আই লাভ ইউ ড্যাড’। সঙ্গে দেন লভ ইমোজি। 

মঙ্গলবার পর্যন্ত নিজের সুরের জাদু দিয়ে মাতিয়েছেন অগণিত শ্রোতাকে। গান গেয়ে মঞ্চে আগুন ঝড়িয়েছেন। আজ শুধু তিনিই নেই। আর কোনও দিন এভাবে মঞ্চ মাতাবেন না তিনি। পড়ে রইল অসংখ্য স্মৃতি আর তাঁর অসাধারণ সব গান। 

কেকে ওরফে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। এক বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী, ভারত জোড়া তাঁর খ্যাতি। কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে প্রয়াত হয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কেকে। জীবনের শেষটাও গানের মধ্যে দিয়েই হয়েছে তাঁর। ইহজগত ছেড়ে এক অন্য সুরের জগত মাতাতে পাড়ি দিয়েছেন কেকে। কাকতালীয়ভাবে মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে কেকে’র শেষ গান ছিল তাঁর সেই বিখ্যাত ‘হাম রহে ইয়া না রহে ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’। এই গানের কথাকে এই জীবনে এমনভাবে সত্যি করে দিয়ে চলে যাবার মতো শিল্পী মানুষ খুব কমই এই ধরায় জন্ম নেন। আর কেকে তাঁদেরই একজন।

মঙ্গলবার নজরুলমঞ্চে অনুষ্ঠান করার পরই অসুস্থবোধ করেন কেকে। অনুষ্ঠান শেষে হোটেল ফিরেই ঘটে বিপদ। তাঁর ম্যানেজারের দাবি অনুযায়ী, হোটেলের ঘুরে ঢুকে সোফায় বসতে গিয়েই তিনি পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান শেষ করে হোটেলে ফেরার পরে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, লবিতে সুস্থভাবেই হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু লিফটে তাঁকে ঝুঁকে থাকতে দেখা গিয়েছে। এরপরেই হোটেলের ঘরে ঢুকে সোফায় বসতে গিয়েই পড়ে যান। আর তারপরেই সব শেষ। 

এদিকে, গতকালই কেকে-এর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, কেকে-এর ফুসফুস এবং লিভারের সমস্যা ছিল। তবে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ নিউ মার্কেট থানায় বিশিষ্ট এই শিল্পীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। বুধবার শিল্পীর ময়নাতদন্তের পর, রবীন্দ্র সদনে কেকে-এর কফিনবন্দি দেহ নিয়ে আসা হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে গান স্যালুটের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।