বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ঠিক কী কারণে মৃত্যু KK-র? প্রকাশ্যে এল ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২২, ০৩:৪৫ পিএম | আপডেট: জুন ৬, ২০২২, ১১:০৬ পিএম

ঠিক কী কারণে মৃত্যু KK-র? প্রকাশ্যে এল ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট
ঠিক কী কারণে মৃত্যু KK-র? প্রকাশ্যে এল ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ গত ৩১ মে, কলকাতার গুরুদাস মহাবিদ্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন কেকে। নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরে যান হোটেলে। এর পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ততক্ষণ সব শেষ। কিছু মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। কেকে-র অকাল প্রয়ানে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা মনে করেন হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে কেকের। তবে প্রকাশ্যে এসেছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। ঠিক কী কারণে এত কম বয়সে মৃত্যু হল কেকের?

সংগীতশিল্পীর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য চিকিৎসকদের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, কেকে’র বাম আর্টারিতে বড় ধরনের ব্লকেজ ছিল। এরপর মঞ্চে প্রচণ্ড গরমে একটানা গান, অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপই কাল হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের অভিমত, সময়মতো সিপিআর দেওয়া হলে হয়তো এই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যেতেন কেকে। এবার পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হল ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’। কী এই রোগ?

মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন-কে চলতি কথায় বলা হয় হার্ট অ্যাটাক। গোটা বিশ্বে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর মত অনুসারে, এই রোগে আক্রান্ত হলে হৃদপিন্ডের পেশির একটি অংশ দীর্ঘসময় ধরে পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। যতক্ষণ না পর্যন্ত রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক হয় ততই ধীরে ধীরে বিকল হতে থাকে হৃদযন্ত্র। এই অবস্থায় বুকে ব্যথা, নিঃশ্বাসের কষ্ট, অত্যধিক ক্লান্তিবোধ, ঘাড়ে ও তলপেটে ব্যথা হওয়া, চোখে অন্ধকার দেখার মতো একাধিক শারীরবৃত্তীয় সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল থেকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন-এর জন্ম হতে পারে। অতিরিক্ত ধূমপান এই সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একজন শিল্পী হিসেবে দর্শকদের মন জয় করার চাপ সবসময়ই থাকত কেকে’র। তবে প্রতিবারই পেশাদারিত্বের সঙ্গে মঞ্চ মাতাতেন তিনি। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসতেই রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে চিকিৎসকদের।

রিপোর্টে দেখা যায়, কেকে’র হৃদপিণ্ডের চারিপাশে মেদের পুরু আস্তরণ, যা রীতিমতো সাদা হয়ে গেছে। হৃদপিন্ডের ভেতরকার কপাটিকাগুলোও অস্বাভাবিক রকমের শক্ত। পরিমিত খাওয়া-দাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্যে থাকার পরেও কেকের হৃদপিন্ডের এই অবস্থা দেখে কপালে ভাঁজ চিকিৎসকদের। এছাড়াও হজমের সমস্যার জন্য অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদ মিলিয়ে একাধিক ওষুধ খেতেন শিল্পী। এমনকি তাঁর শরীর থেকে অ্যান্টাসিড ও গ্যাস্ট্রিকের মোট ১০ রকমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ ও ৩১ মে পরপর দু’দিন নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান ছিল কেকে’র। অনুষ্ঠানের সময় থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শারীরিক অসুস্থতা। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে স্ত্রীকে ফোন করে জানান, তাঁর কাঁধ এবং হাতে অসম্ভব ব্যথা করছে। সেদিন মঞ্চে থাকাকালীন স্পটলাইট বন্ধ করতে অনুরোধ করেন তিনি। কিছুক্ষণ ছাড়াছাড়াই ঘাম মোছেন, জল খান। এরপর অনুষ্ঠান শেষে ফিরে যান কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।