শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ছিন্ন হল দীর্ঘদিনের বন্ধন! স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সন্ধ্যা রায়

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২২, ০২:৩৩ পিএম | আপডেট: জুলাই ৪, ২০২২, ০৮:৩৭ পিএম

ছিন্ন হল দীর্ঘদিনের বন্ধন! স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সন্ধ্যা রায়
ছিন্ন হল দীর্ঘদিনের বন্ধন! স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সন্ধ্যা রায়

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান। প্রয়াত নবতিপর পরিচালক তরুণ মজুমদার। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্র জগতে। তবে তরুণ মজুমদারের মৃত্যু বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতি। দীর্ঘ কয়েক বছরের সম্পর্ক। একে অপরের সুখ-দুঃখের ভাগীদার তাঁরা। বৈবাহিক জীবনে নানান জটিলতার সম্মুখীন হলেও স্বামী-স্ত্রীর মানসিক বন্ধন কি আর এত সহজে ছিন্ন করা যায়! তাই স্বামীর শারীরিক অবনতির খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন এসএসকেএম-এ। ঠাকুর ঘরে বসে তাঁর কেবল একটাই প্রার্থনা, মানুষটা যেন সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরে। কিন্তু এবার আর কোনও মিরাকেল হল না। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন প্রবাদপ্রতীম পরিচালক তরুণ মজুমদার।

স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সন্ধ্যা রায়। ক্রমশই গলা বুজে আসছে তাঁর। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা একে অপরের থেকে আলাদাই থাকতেন। পরিচালক তরুণ মজুমদার বেশিরভাগ সময় কাটাতেন চেন্নাই অথবা বেঙ্গালুরুতে। অন্যদিকে সন্ধ্যা রায় অধিকাংশ সময়ই থাকতেন দিল্লি অথবা মেদিনীপুরে। তাই দুজনের মধ্যে সাক্ষাৎ সেভাবে হতই না। এদিন হাসপাতালে ছুটে গেলেও স্বামীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ হয়নি। এই আফসোস নিয়েই সারাটা জীবন কাটাতে হবে সন্ধ্যা রায়কে।

অভিনেত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তরুণ মজুমদার বরাবরই কাজ পাগল মানুষ ছিলেন। কাজের প্রতি তাঁর এক অদ্ভুত নিষ্ঠা এবং অধ্যাবসায় ছিল। তাঁর হাত ধরেই চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেছেন বহু প্রতিভাবান শিল্পী। কাজের ফাঁকে জীবনে আনন্দ, মজা, খাওয়া দাওয়া কোনও কিছুর প্রতিই তাঁর বিশেষ উৎসাহ ছিল না। জীবনে কেবল একটাই চিন্তা, কীভাবে আরও ভালো কাজ করা যায়! এরপর ধীরে ধীরে যুগ বদলায়। কাজের ধারায় আসে পরিবর্তন। শেষের দিকে কাজের অফার কম আসলেও কাজের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা কমেনি পরিচালকের। তবে তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন একথা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না তরুণ মজুমদারের স্ত্রী তথা বর্ষীয়ান অভিনেতা সন্ধ্যা রায়।

তরুন মজুমদার এবং সন্ধ্যা রায়ের প্রেমের কাহিনী সিনেমাপ্রেমীদের কাছে অজানা নয়। কাজের সূত্রেই দুজনের আলাপ। সেখান থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের স্বীকৃতি দিতেই সাত পাকে বাঁধা পড়েন পরিচালক ও অভিনেত্রী। একসঙ্গে দীর্ঘদিন দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন তাঁরা। শেষের দিকে অবশ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ে। ফলস্বরূপ আলাদা থাকা শুরু করেন তাঁরা। আলাদা থাকলেও কাগজে-কলমে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী হয়েই থেকেছেন। 

এক সময় তরুণ মজুমদারের বহু ছবিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন সন্ধ্যা রায়। তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘আলোর পিপাসা’, ‘ঠগিনী’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘পলাতক’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘কুহেলি’, ‘সংসার সীমান্তে’ সহ একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। প্রতিটি ছবিই সুপারহিট। এরকম অসংখ্য ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন রিয়েল লাইফ জুটি।

মৃত্যুকালে তরুণ মজুমদারের বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। একাধিক শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গত ১৪ জুন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন বর্ষীয়ান পরিচালক। এরপর গতকাল অর্থাৎ রবিবার শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি ঘটে। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। বসে মেডিকেল বোর্ডও। কিন্তু চিকিৎসকদের দীর্ঘ প্রচেষ্টা বিফলে যায়। অতঃপর সোমবার সকাল ১১ টা ৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পরিচালক তরুণ মজুমদার।

বয়সজনিত অসুস্থতা দীর্ঘদিন ধরেই দেখা দিয়েছিল। তার উপরে ছিল কিডনির সমস্যা। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপও পিছু ছাড়েনি। তার উপরে আবার নতুন করে শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের সংক্রমণজনিত সমস্যা দেখা দেয়। সংকটজনক অবস্থায় গত মাসে তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। মাঝে শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রবিবার আচমকাই অবনতি ঘটে। রক্তে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা। সোমবার ভোর থেকে কমতে শুরু করে হৃদস্পন্দন। এরপরই আসে দুঃসংবাদ। তরুণ মজুমদারের মৃত্যুতে যেন একটি স্বর্ণযুগের অবসান ঘটল।