শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

এই পুজোয় আমন্ত্রিত হতেন ইংরেজরাও! ১২৯ বছরে পা দিল মালদার মিশ্র জমিদারদের সাবেকি পুজো

মৌসুমী মোদক | তনুজ জৈন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০৭:০৩ পিএম | আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২, ০১:০৩ এএম

এই পুজোয় আমন্ত্রিত হতেন ইংরেজরাও! ১২৯ বছরে পা দিল মালদার মিশ্র জমিদারদের সাবেকি পুজো
এই পুজোয় আমন্ত্রিত হতেন ইংরেজরাও! ১২৯ বছরে পা দিল মালদার মিশ্র জমিদারদের সাবেকি পুজো

এই পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন জমিদার হরিমোহন মিশ্র। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ভালুকা বাজার এলাকায় তাঁর জমিদারির মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা এই পুজো এখন সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। এক সময় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মিশ্র জমিদারদের জমিদারি বিস্তৃত ছিল হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভালুকা সহ বিহারের আজিমগঞ্জ, বারসই, মনিহারি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। সে সময় তাদের জমিদারির মধ্যে ভালুকা ছিল প্রধান অংশ, অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ছিল সদর।প্রায় একশ সাতাশ বছরেরও আগে তখন এলাকায় ইংরেজ শাসন। সে সময় তাঁর জমিদারির ভালুকার ফুলহর নদীর তীরে প্রায় ২০০ বিঘা জমির উপর তৈরি করেছিলেন দুর্গা মন্দির। সেখানেই শুরু হয় দেবীর পুজো।

মিশ্র জমিদারির বর্তমান সদস্যরা জানালেন, হরিমোহন মিশ্র দাপুটে জমিদারের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন ধর্মপ্রিয়। সাতদিন ধরে চলত দুর্গা পূজাকে ঘিরে উৎসব অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিত হতেন ইংরেজ সাহেব রাও। চলত গান বাজনা। কলকাতা থেকে আনা হতো যাত্রা পার্টি। হাতির পিঠে করে জমিদার বাড়ির সদস্যরা যেতেন পুজো দিতে। চলত নরনারায়ন সেবা ও বস্ত্র বিতরণ। আমন্ত্রিত হত সারা জমিদারের প্রজারা। 

১৯৬৪ সালের ফুলহরের ভাঙ্গনে তলিয়ে যায় জমিদার হরিমোহন মিশ্রের তৈরি করা দুর্গা মন্দির। তারপরেই ভালুকা বাজারে এই পুজো স্থানান্তরিত হয়ে যায়।১৩০১ বঙ্গাব্দে জমিদার হরিমোহন এই দুর্গাপূজা প্রতিষ্ঠা করেন। আজ এই পুজো সর্বজনীন হয়ে গেলেও সাবেকি প্রতিমাতেই এখনও পুজো হয়। এই বাড়িরই সন্তান রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী সৌরীন্দ্র মোহন মিশ্র।

জমিদার বাড়ির সদস্যরা জানালেন, বর্তমানে এই পূজাটি এখন ভালুকা বাজারের বাসিন্দারাই আয়োজন করে থাকে। আগে জমিদারি স্টেট থেকে একটা খরচ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেটা আর দেওয়া হয় না। ১৯৫৩ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে এলাকার বাসিন্দারা উদ্যোগে এই পুজো করে আসছে। যদিও এই মিশ্র বংশের আদি পুজো পিপলার বড় চালি।

বর্তমান পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে সভাপতি রাজেশ চৌধুরী জানান, এলাকার জমিদাররা প্রতিষ্ঠা করলেও কালের নিয়মে এই পুজো এখন এলাকায় সর্বজনীন হয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীরা চাঁদা তুলে এই পুজোর আয়োজন করে থাকে। এবার ১২৯তম পুজো। পুজোর চারদিন ধুমধাম করে নিষ্ঠা সহকারে সাবেকি প্রতিমার পুজো করা হয়। সারা ভালুকা বাজার এলাকার লোকজন এই পুজোয় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন। অষ্টমীর দিন এলাকার সমস্ত মহিলা এক হয়ে মায়ের পূজা দেন। আগে যাত্রাপালা হলেও এখন আর অর্থের অভাবে যাত্রাপালা করা সম্ভব হয় না। তবে জনসেবা ও বস্ত্র বিতরণ হয়ে থাকে।