শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর দেখা! বাবা-মেয়েকে মিলিয়ে দিল করোনা অতিমারী

০৮:২৬ পিএম, মে ১৪, ২০২১

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর দেখা! বাবা-মেয়েকে মিলিয়ে দিল করোনা অতিমারী

করোনা অতিমারীতে মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রায় রোজই নিজের প্রিয়জনদের হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। তবে করোনা কি শুধু বিচ্ছেদই ঘটাচ্ছে? নাহ! বরং নিজের প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিয়েও দিচ্ছে! সম্প্রতি ঘটল এমন এক হৃদয়গ্রাহী ঘটনাই! যেখানে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর দেখা হল বাবা-মেয়ের! সৌজন্যে কোভিড ১৯!

ঘটনাটি কেরালার। সেখানের ৩৩ বছরের সিপিএম কর্মী অজিতার ৬৫ বছরের বাবা শিবাজি দীর্ঘদিন ধরেই জেলে বন্দী। এক কংগ্রেস কর্মীকে খুনের ঘটনায় মেয়ের জন্মের বছরই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শিবাজি। জানা গিয়েছে, ১৯৮৫ সালে শিবাজির সঙ্গে হাতাহাতি হওয়ার ফলে মৃত্যু হয় কংগ্রেসের ওই কর্মীর। এদিকে, খুনের অভিযোগ মাথায় নিয়েই গা ঢাকা দিয়ে বিয়ে সারেন শিবাজি। তিন বছর পর ১৯৮৮ সালে অজিতার জন্মের পরই শিবাজিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অজিতা তখন মাত্র কয়েক মাসের শিশু!

তারপর থেকেই দীর্ঘদিন জেলে বন্দী শিবাজি। এর মধ্যে একবারও মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। তবে মেয়েকে দেখার জন্য টানা ৪ বার জেল থেকে পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন শিবাজি। তবে প্রতিবারই ধরা পড়ে যান। সাজার মেয়াদও উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, শিবাজি গ্রেপ্তার হওয়ার এক বছরের মধ্যেই আত্মহত্যা করেন তাঁর স্ত্রী। মামারবাড়িতে বড় হয়ে ওঠেন অজিতা। অনেক পরেই তিনি জেলবন্দী বাবার কথা জানতে পারেন।

এরপর স্থানীয় সিপিআইএম নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাবাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও বাধা দেন নিহত সেই কংগ্রেস নেতার ছেলে। বর্তমানে তিনি একজন পুলিশ আধিকারিক। অজিতাকে জানানো হয়, এই অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের। জেল পালানোর চেষ্টার জন্য সাজা বেড়ে হয় ১৬ বছর। কিন্তু জেলে শিবাজির আচরণ ভালো না থাকার দরুন তাঁকে ছাড়া যাবে না। ফলে বাবার সঙ্গে দেখা হওয়াও আর হয়ে ওঠে না অজিতা।

এর মধ্যেই মাথাচাড়া দেয় কোভিড অতিমারী। গতবছরই ২০২০ সালে কোভিডের কারণে আদালত বন্দিদের প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে বছর মুক্তি পাননি শিবাজি। তবে চলতি বছরে ভাগ্যলক্ষ্মী মুখ তুলে চান। প্যারোলে শিবাজির মুক্তির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই বাবার সঙ্গে ৩৩ বছর পর দেখা হয় মেয়ের।

বর্তমানে স্বামী, সন্তান নিয়ে সুখে ঘর-সংসার করেন অজিতা। বাবার মুক্তির পর তাঁকে নিয়েই নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন বুধবার। আপাতত সেখানেই রয়েছেন শিবাজি। তবে এই সুখ আর বেশিদিন নেই। তিনমাসের প্যারোল শেষে শিবাজিকে ফিরতে হবে সেই জেলেই। ততদিন বাবার সঙ্গ দিতে একমুহূর্তও ছাড়ছেন না অজিতা।