শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কার স্মৃতিতে বিধান চন্দ্র রায় কল্যানী শহরের নামকরণ করেছিলেন? জানুন অজানা এক কাহিনী

শ্রেয়সী দত্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২২, ০৭:৩৯ এএম | আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২২, ০১:৩৯ পিএম

কার স্মৃতিতে বিধান চন্দ্র রায় কল্যানী শহরের নামকরণ করেছিলেন? জানুন অজানা এক কাহিনী
কার স্মৃতিতে বিধান চন্দ্র রায় কল্যানী শহরের নামকরণ করেছিলেন? জানুন অজানা এক কাহিনী

আপনি কী জানেন কোন মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতিতে পালিত হয় চিকিৎসক দিবস? জেনে রাখুন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সম্মানে, ১৯৯১ সালে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে এই দিনটি প্রথমবারের মতো চিকিৎসক দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন যিনি ভালোবাসা, প্রশংসা  ও সমাদর কুড়িয়েছিলেন সমগ্র ভারতবর্ষ থেকেই। তিনি এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন যিনি স্বপ্ন দেখতেন বাংলা-বিহার এক করার। বাংলার সর্বকালীন আদর্শবাদী মুখ্যমন্ত্রী বলা হয় তাঁকে।

ড. বিধান চন্দ্র রায়ের অন্যতম বড় পরিচয় ছিল তিনি ছিলেন মানবদরদী ডাক্তার। সাধারণ মানুষ থেকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবাই ছিলেন তাঁর রোগীর তালিকা। তিনি ছিলেন এমন একজন চিকিৎসক, যিনি বাংলার ইতিহাসের এক অত্যন্ত টালমাটাল, বিপদজনক সময়ে মাসিক লাখ টাকার প্র্যাকটিস ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের স্বার্থে বিপন্ন বাঙালিকে রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

এহেন ব্যক্তিত্বকে ১৯৬১ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি  ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত করা হয়। তাঁর পেশাগত জীবন, রাজনৈতিক জীবনের মতো ব্যক্তিগত জীবন‌ও ছিল  রোমাঞ্চকর, ট্রাজেডিতে পরিপূর্ণ! আজীবন অবিবাহিত ছিলেন ড.বিধানচন্দ্র রায়! কেন জানেন?

তরুণ বিধান চন্দ্রের প্রেমের সম্পর্ক ছিল কল্যাণী সরকারের সঙ্গে। কল্যানী দেবী ছিলেন বিখ্যাত চিকিৎসক নীলরতন সরকারের কন্যা। নিজেদের প্রেমকে পূর্ণতা দিতে কল্যানীকে বিয়ে করার আর্জি নিয়ে নীলরতনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। তবে সেখান থেকে মেলে তীব্র প্রত্যাখ্যান। স্বনামধন্য ডাক্তার নীলরতন সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, তাঁর কন্যার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বিধানচন্দ্র সক্ষম নন। এরপর ভগ্নহৃদয়ে বিধানচন্দ্র উচ্চশিক্ষায় মন দেন। কিন্তু ভোলেননি নিজের ভালোবাসাকে। কল্যাণীর জন্য কোনদিন অন্য কারর সঙ্গে ‌ সংসার করেননি বিধানচন্দ্র। কল্যানীও ভালোবাসতেন  বিধান‍‍`কে। তিনিও বিয়ে করেননি। এরপর হঠাৎই একদিন বিধানচন্দ্র খবর পান এই ঘটনার বছর তিনেক পরে কল্যাণী আত্মহত্যা করেছেন।

কল্যানীর প্রতি বিধানচন্দ্রের ভালোবাসা ছিল অপার! আর তার প্রমাণ মেলে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে। সেইসময় পশ্চিমবঙ্গ  পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তু সমস্যায় জেরবার। ওই মোক্ষম সময়ে বিধানচন্দ্র বুঝেছিলেন, কলকাতা‍‍`তে হবেনা তিলোত্তমা‍‍`র অনতিদূরেই একটি নতুন টাউনশিপ গড়ে তুলতে করতে হবে। সেই মতোই নদিয়া জেলায় গড়ে ওঠে একটি নতুন টাউনশিপ।‌‌  আর বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধানচন্দ্র রায় এই শহরের নাম নিজে দেন! শহরের নাম রাখেন নিজের প্রয়াত প্রেমিকা কল্যাণীর নামে! কল্যাণী! আর এই ভাবেই নিজের ভালোবাসাকে গোটা বাংলার বুকে অমর করে যান ড. বিধানচন্দ্র রায়।