বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

ইচ্ছেশক্তির জয়! বেকারিতে দৈনিক ৫০ টাকা মজুরিতে কাজ, আজ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার এই যুবক

০৮:২০ পিএম, জুলাই ১, ২০২১

ইচ্ছেশক্তির জয়! বেকারিতে দৈনিক ৫০ টাকা মজুরিতে কাজ, আজ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার এই যুবক

কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সে প্রবাদই যেন ফের প্রমাণ করলেন বছর আঠাশের বলবঙ্ক তিওয়ারি। একটা সময় দৈনিক মাত্র ৫০ টাকা মজুরিতে বেকারিতে কাজ করতেন। অদম্য ইচ্ছেশক্তি এবং জেদের বশে সেখান থেকে আজ তিনি হয়ে উঠেছেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ এক অফিসার। শুনে রূপকথার গল্প মনে হলেও এ কাহিনী ঘোরতর বাস্তব!

বিহারের ভোজপুর জেলার আরার সুন্দরপুর বারজা গ্রামের যুবক বলবঙ্কের জন্ম এক যৌথ চাষি পরিবারে। প্রায় নিত্যদিনই সংসারে লেগে থাকত অভাব। সেই কারণে দশম শ্রেণী পাশ করার পরই কাজে নেমে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলবঙ্ক জানিয়েছেন, "আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। আমার বাবা কৃষক এবং আমরা যৌথ পরিবারে থাকতাম। ফলে দশম শ্রেণী পাস করার পরেই কাজ করা ছাড়া উপায় ছিল না।" সেই কারণে সংসারের হাল ধরতে টিউশনির পাশাপাশি বেকারির দোকানেও কাজ শুরু করেন ওই যুবক।

বলবঙ্ক জানিয়েছেন, "ম্যাট্রিক পাস করার পরে কাজ সন্ধানের জন্য আমি ২০০৮ সালে ওড়িশার রাউরকেলায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমি প্রথম কয়েক মাস একটি লোহার কারখানায় কাজ করি। তারপর একটি বেকারি কারখানায় প্রতিদিন ৫০ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করি। পাশাপাশি চলে টিউশনি পড়ানোও।" এরপর রাউরকেলা থেকেই দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বলবঙ্ক।

কলেজে পড়াকালীনই এক কাকার মারফত দানাপুরে সেনা নিয়োগের খবর পান ওই যুবক। শুনেই তড়িঘড়ি পরীক্ষায় বসেন তিনি। প্রথমবার সফলতা আসে না। কিন্তু হাল না ছেড়ে দ্বিতীয়বার ফের পরীক্ষা দিতেই সাফল্য আসে হাতের মুঠোয়। পরীক্ষায় পাশ করে সিপাই পদে ভোপালে পোস্টিং হয় বলবঙ্কের। কিন্তু তিনি যে থেমে থাকার পাত্র নন। ভোপালে পোস্টিং থাকাকালীনই তিনি জানতে পারেন অফিসার হতে গেলে আর্মি ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করতে হবে৷ সেইমতো পরীক্ষা দিয়ে সেখানে ভর্তিও হন তিনি।

সম্প্রতি সেই সেনা শিক্ষাকেন্দ্র থেকে স্নাতক পাশ করে সেনায় যোগ দিলেন বলবঙ্ক। গত শনিবার ছিল সেই দিন। যেদিন নিজের সাফল্যের সোপান স্পর্শ করেন বছর আঠাশের ওই যুবক। শনিবারই তাঁকে অফিসার হিসেবে কাজের যাবতীয় দায়িত্বভার দেওয়া হয়। আপাতত সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারের পাশাপাশি তিনি এক সুখী বিবাহিত মানুষও৷ তাঁর সাফল্য ভাগ করে নিতে সেদিন পাশে ছিলেন স্ত্রী রুচি এবং তিন মাসের কন্যাও। মানসিক জেদ এবং ইচ্ছেশক্তি থাকলে যে মানুষ যেকোনও বাধাবিপত্তি পেরিয়ে অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলতে পারে বলবঙ্ক যেন তার-ই এক উদাহরণ!