বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

করোনা কেড়ে নিল কালনার '৫ টাকার ডাক্তারবাবু'র প্রাণ! শহর জুড়ে গভীর শোকের ছায়া

০৯:২১ পিএম, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১

করোনা কেড়ে নিল কালনার '৫ টাকার ডাক্তারবাবু'র প্রাণ! শহর জুড়ে গভীর শোকের ছায়া

করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের মৃত্যু মিছিলের খবর মিলছে গোটা বিশ্বজুড়েই। এ রাজ্য তার ব্যতিক্রম নয়। রাজ্যে ইতিমধ্যেই কোভিড কেড়ে নিয়েছে বহু চিকিৎসকের প্রাণ। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালেন কালনার 'পাঁচ টাকার ডাক্তারবাবু' গৌরাঙ্গ গোস্বামী। কোভিড আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে আজই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এই চিকিৎসক। তাঁর মৃত্যুতে কালনা জুড়ে নেমেছে গভীর শোকের ছায়া।

কালনাবাসীর কাছে চিকিৎসক গৌরাঙ্গ গোস্বামী ছিলেন সাক্ষাৎ ভগবান! গত চার দশকেরও বেশি মাত্র পাঁচ টাকা ভিজিট নিয়েই চেম্বারে রোগী দেখতেন কালনা পুরসভার সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধান এই চিকিৎসক। প্রথমে ভিজিট ছিল তিন টাকা, খুচরোর সমস্যা মেটাতে পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচে। আর সেই পাঁচ টাকাতেই যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করতেন গৌরাঙ্গ বাবু। প্রতিদিন ভোর থেকেই তাঁর বাড়ির সামনে ভীড় জমাতেন রোগীরা। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে রোগী দেখা ছাড়াও রাত-বিরেতে রোগী দেখতে তাঁদের বাড়িতেও যেতেন গৌরাঙ্গ বাবু।

দেশে করোনার কঠিন সময়েও প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ৭৪ বছরের এই চিকিৎসক। একদিনের জন্যও বন্ধ রাখেননি নিজের চিকিৎসালয়। বয়স বেড়ে যাওয়ায় করোনা আবহে অনেকেই গৌরাঙ্গ বাবুকে রোগী দেখা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের কর্তব্য থেকে পিছু হটেননি জনদরদী চিকিৎসক। করোনাকালীন কঠিন সময়ে হাজার হাজার মানুষ সুস্থ হয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসায়। এমনকি অসুস্থ হওয়ার আগের দিনও মাত্র পাঁচ টাকায় রোগী দেখেছিলেন তিনি। তবে নিয়তির খেলায় তিনি নিজেই আক্রান্ত হলেন করোনায়। শেষ পর্যন্ত সেই ভাইরাসের কাছেই মানতে হল গৌরাঙ্গ বাবুকে।

আজ প্রিয় ডাক্তারবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়েই তাঁর বাড়ির চেম্বারে এসে হাজির স্থানীয়রা। জনদরদী এই চিকিৎসক যে আর নেই তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না কালনাবাসী। আর শুধু চিকিৎসাই নয়, গত ৪০ বছর ধরে কালনা শহরে তাল মিলিয়ে রাজনীতিও করেছেন গৌরাঙ্গ বাবু। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কালনা পৌরসভার চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন এই পাঁচ টাকার ডাক্তারবাবু। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কালনা শহরের সিপিএম-এর এরিয়া কমিটির সম্পাদকও ছিলেন। সামলেছেন পূর্ত বিভাগের দায়িত্বও। রোগী দেখার সঙ্গেই পুরোদমে চালাতেন সিপিএমের যুব সংগঠনের কাজ। প্রিয় চিকিৎসকের পাশাপাশি এলাকার অত্যন্ত প্রিয় এক নেতাও হয়ে উঠেছিলেন অচিরেই। আর সেই প্রিয় মানুষটির প্রয়াণে কালনাবাসী যে শোকে বিহ্বল তা বলাই বাহুল্য!