শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

নববর্ষের সঙ্গে জড়িয়ে হালখাতা! রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকেই বাংলায় জমে উঠল হালখাতার উৎসব

০৪:১৮ পিএম, এপ্রিল ১৫, ২০২১

নববর্ষের সঙ্গে জড়িয়ে হালখাতা! রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকেই বাংলায় জমে উঠল হালখাতার উৎসব

আজ বৈশাখের প্রথম দিন। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে নতুন বছর বা নববর্ষের সূচনা হয়। আর এই নতুন বছরের প্রথম দিন দোকানে দোকানে হালখাতা উৎসব উদযাপন করেন ব্যবসায়ীরা। এ দেশে সেই মোগল আমল থেকেই হালখাতার উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আর এই বাংলায় মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকেই কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে বসত জাঁকজমক পূর্ণ হালখাতার উৎসব। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস...

প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে প্রজাদের বকেয়া কর-খাজনার খাতা ফেলে দিয়ে নতুন খাতা চালু করতেন কৃষ্ণচন্দ্র। ফলে সেদিন রাজবাড়িতে ধুমধাম করে পালিত হত হালখাতা উদযাপন। এই অনুষ্ঠানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি আমন্ত্রিত থাকতেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন লর্ড ক্লাইভ, বর্ধমানের রাজা কৃষ্ণরাম, শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণদেব প্রমুখ। সেদিন গৃহদেবতা বড় নারায়ণকে ঘিরে হত পুণ্যাহ, কপিলা গীতি। এছাড়াও বসত কাব্য সম্মেলন ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর। বিশিষ্ট কোনও পণ্ডিতকে নির্বাচন করে দান করা হত স্বর্ণ গাভী। গীতিকারদের দেওয়া হত পঞ্চশস্য।

এদিন দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ খাজনার হিসাব দিতে আসতেন। আগত প্রজাদের হাতে তুলে দেওয়া হত বকেয়া খাজনার হিসাব। বছরে এই একটি দিনেই প্রজারা সরাসরি রাজার হাতে কর নিবেদন করার সুযোগ পেতেন। তাই প্রজারা নিজেদের সঙ্গে নিয়ে আসতেন কিছু নজরানাও। সেইসঙ্গে রাজার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা নিজেদের সুখ দুঃখের কথাও সারতেন এদিন। খাজনা পর্ব মিটে গেলে বারোদুয়ারির প্রাঙ্গণেই পংক্তিভোজনে বসতেন প্রজারা। তদারকি করতেন রাজা স্বয়ং! এছাড়াও কৃষ্ণনগরের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘকালের সংস্কার ছিল রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে ব্যবসার নতুন খাতা ছুঁইয়ে আনা। সেই প্রথাও বহু বছর ধরেই চলে এসেছিল।

সেই জমিদার প্রথা তো কবেই উঠে গিয়েছে! খাজনা বা কর আদায়ের ব্যাপারও তাই আজ নেই। ফলে রাজবাড়ির সেই জাঁক-জমক পূর্ণ অনুষ্ঠানও হয় না। তবে হালখাতার দিন রাজবাড়ির গৃহদেবতার পায়ে নতুন খাতা পুজো করানো রীতি পালিত হয়ে আসছে আজও। কিন্তু তাতে শুধু বাজবাড়ির বাসিন্দাদেরই অধিকার। এখন ব্যবসায়ীদের ইচ্ছা থাকলেও রাজবাড়ির পরিবেশ পরিস্থিতি পালটে যাওয়ার কারণে আগের মতো নিজেদের খাতা ছুঁইয়ে আনা আর হয় না।