শান্তনু নায়ডু, সাধারণ মানুষের কাছে নামটা বিশেষ পরিচিত না হলেও দেশের অন্যতম প্রখ্যাত শিল্পপতি রতন টাটার ছায়াসঙ্গী তিনি। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে টাটার পরামর্শদাতা থেকে শুরু সর্বত্রই শান্তনুর অবাধ বিচরণ। এই টাটা গোষ্ঠীতেই সাধারণ এক কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তাঁর তিনি শিল্পপতির অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী। শান্তনুকে ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না রতন টাটার৷ এমনকি রতন টাটার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে একটি বইও লিখে ফেলেছেন শান্তনু। যার নাম, ‘আই কেম আপন এ লাইটহাউজ।' কিন্তু কীভাবে বদলালো দু'জনের সম্পর্কের এই সমীকরণ? আজ জেনে নেওয়া যাক সেই কাহিনীই...
আমেরিকায় কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাশ করার পর টাটা গোষ্ঠীরই একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন শান্তনু। তাঁর পূর্বপুরুষরাও এই সংস্থাতেই কাজ করতেন। সেই সূত্র ধরে শান্তনুও এখানে যোগদান করেন৷ এরপর ধীরে ধীরে বাড়ে সংস্থার চেয়ারম্যানের সঙ্গে সখ্যতা। এর পিছনেও রয়েছে, দু'জনেরই রাস্তার কুকুরদের প্রতি মমতা, ভালোবাসা ও টান। দুজনেই সমোমনোভাবাপন্ন হওয়ায় কাছাকাছি আসতে বেশি দেরি হয়নি।
যদিও এর পিছনে এক ঘটনার কথা উল্লেখ করতেই হবে। একবার তাঁর গাড়িতে একটি রাস্তার কুকুরের ধাক্কা লাগার পর থেকেই শান্তনু সিদ্ধান্ত নেন তাদের জন্য কিছু করার। যেমন ভাবা তেমনই কাজ! নিজে তৎপর হয়ে এরপর টাটা গোষ্ঠীর এমিরেটাস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে কুকুরদের গলায় এক ধরনের কলার গলায় পরানোর উদ্যোগ নেন। এর ফলে গাড়ির আলো পড়লেই কলারে বিচ্ছুরিত হবে এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে রাস্তার অবলা প্রাণীগুলি৷
এই বিশেষ প্রকার কলার তৈরির জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে নিজের ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত ওয়েবমিনারের আয়োজন করতে থাকেন শান্তনু৷ কীভাবে অল্প বয়সে শিল্পপতি হওয়া যায় সেখানে তাই নিয়েই আলোচনা হতো। ওয়েবমিনারে যোগদানকারীদের থেকে ৫০০ করে টাকা নিয়ে কুকুরদের জন্য এই বিশেষ কলার তৈরির কাজে লাগাতেন শান্তনু। 'মোটোপস' নামে নিজের একটি সংস্থাও খুলে ফেলেছিলেন।
এরপরেই একদিন তাঁর বাবার পরামর্শে রতন টাটাকে একটি চিঠি লেখেন শান্তনু। সেই চিঠিতে পথের অবলা প্রাণীগুলিকে কিছু করার কথা বা তাদের প্রতি নিজের ভাবনার কথা ব্যক্ত করেন তিনি। সেই চিঠি পেয়েই রতন টাটা ডেকে পাঠান শান্তনুকে। দু'জনে বৈঠকেও বসেন। সেই থেকেই দু'জনের সম্পর্কের শুরু৷ আর এখন টাটার অন্যতম কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছেন বছর আটাশের ওই যুবক৷ সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও ট্রেন্ড থেকে শুরু করে ইমোজি, সমস্ত কিছুই শান্তনুর হাত ধরে শেখা রতন টাটার৷
মাঝে পড়াশোনার কারণে শান্তনু আমেরিকা চলে গেলেও দেশে ফেরার পরেই তাঁকে নিজের সহকর্মী বানিয়ে ফেলেন তিনি। বর্তমানে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনে টাটার পরামর্শ দাতার কাজ করেন শান্তনু। নিজের গুণেই একজন সাধারণ কর্মী থেকে এখন শিল্পপতির চোখের মণি হয়ে উঠেছেন এই যুবক।