বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সব্যসাচী মণ্ডল খুনের ঘটনায় পুলিশের বড় সাফল্য! বিহার থেকে গ্রেফতার আরও দুই অভিযুক্ত

০৪:২৮ পিএম, নভেম্বর ১৯, ২০২১

সব্যসাচী মণ্ডল খুনের ঘটনায় পুলিশের বড় সাফল্য! বিহার থেকে গ্রেফতার আরও দুই অভিযুক্ত

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ হাওড়ার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল খুনের ঘটনায় পুলিশ আরও এক কদম এগোল। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই অপর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। উল্লেখ্য, আগেই এই খুনের ঘটনায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন মৃতের খুড়তুতো ভাই সোমনাথ মণ্ডল।

ধৃত দুই অভিযুক্তের নাম মেহতাব আলম ও  সাইডে আলম। এই দুই অভিযুক্তই কলকাতার নারকেলডাঙার বাসিন্দা। সব্যসাচীকে খুনের পর এই দুই অভিযুক্ত বিহারে পালিয়ে যায়। গতকাল রাতে তাদের বিহারের রামপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সব্যসাচীকে খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এই দুই অভিযুক্ত। মৃত সব্যসাচীর ভাই, মূল অভিযুক্ত সোমনাথ মণ্ডলই এই দুজনের কথা জেরায় জানিয়েছিলেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। এই মুহূর্তে তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন যে, সব্যসাচীকে খুনে এই দুই অভিযুক্তের কী ভূমিকা ছিল? শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, শুক্রবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। দুই সপ্তাহের হেফাজত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবারই আদালতে আত্মসমপর্ণ করেন নিহত সব্যসাচীর ভাই সোমনাথ। আগামী ৩০ নভেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। জানা গিয়েছে, সব্যসাচীকে খুনের পরিকল্পনার নেপথ্যে মূল হোতা ছিলেন এই সোমনাথ। এই সোমনাথই সব্যসাচীকে খুন করার জন্য সুপারি কিলার নিয়োগ করেছিলেন। পাশাপাশি সব্যসাচীর গ্রামের বাড়ির হদিশ থেকে শুরু কীভাবে, কখন খুন করতে হবে সেই গোটা ছকটা সোমনাথের নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত।

অন্যদিকে, ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল খুনে গ্রেফতার হয়েছে আরও এক দুষ্কৃতী। ধৃতের নাম মহম্মদ জাভেদ আকতার। রবিবার রাতে কলকাতার ময়দান থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের একটি দল। এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানান, ধৃত মহম্মদ জাভেদ আকতার সুপারি কিলার টিমের সদস্য ছিল। সোমবার অভিযুক্তকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। এর আগে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় সুপারি কিলার রিকিকে। ইতিমধ্যেই রিকিকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছেন তদন্তকারীরা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত মাসেই কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল খুন হয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার গ্রামের বাড়িতে। বছর চুয়াল্লিশের ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি রায়নার দেরিয়াপুর গ্রামে। কাজের সূত্রে তিনি থাকতেন হাওড়ার শিবপুরে। সেখানে তাঁর পলিথিনের ব্যবসাও ছিল।

এদিকে, কীভাবে দেরিয়াপুরে গ্রামের বাড়িতে আসা সব্যসাচীকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয় তার বিবরণ দিয়েছে ধৃত রিকি। তাকে সঙ্গে নিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণও করে পুলিশ। এদিন মূল অভিযুক্ত জানিসার আলম ওরফে রিকিকে পুলিশ নিয়ে আসে সব্যসাচী মন্ডলের দেরিয়াপুরের বাড়িতে।

রিকি পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার দিন প্রথমে তাঁরা ঠাকুরদালানের কাছে এসে চাকু দেখিয়ে ড্রাইভারকে ভয় দেখায়। তাঁর মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেওয়া হয়। সব্যসাচীর গাড়ির চালক আনন্দ সাউকে বাধ্য করা হয় সব্যসাচীকে ডেকে আনতে। সব্যসাচী দোতলা থেকে নামার আগেই আততায়ীরা নিজের নিজের পজিশন নিয়ে তৈরি ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এরপর সব্যসাচী ছাদ থেকে নেমে এলেই কোনও কিছু ভাবার আগেই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে রিকি। এমনটাই অভিযোগ।

সেই গুলি লেগেছে কি না তা রিকি বলতে পারেননি। এ সময় সব্যসাচী পালাতে যান। কিন্তু পালাতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে পড়ে যান সব্যসাচী।  রিকি জানান, সে সময় সে আরও এক রাউন্ড গুলি চালায়। এরপর সব্যসাচীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই পড়ে যান সব্যসাচী।

এরপর সেখানেই তাঁকে ওই অবস্থায় ফেলে চম্পট দেয় রিকি ও তাঁর সঙ্গীরা। এদিন গুলি চালানো ও কোপানোর কথা স্বীকার করেছেন রিকি, পুলিশ সূত্রে এমনটাই খবর। এদিন সে পুলিশের সামনে ভেঙে পড়ে। তদন্তে রায়না থানার পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন রায়না থানার ওসি পুলক মণ্ডল।

পুলিশ সূত্রে খবর, জেরার মুখে রিকি জানিয়েছেন, তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকায় ঠিক করেছিলেন সব্যসাচীর ছোট কাকার ছেলে সোমনাথ মণ্ডল। এর মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। বাকিটা পরে দেওয়ার কথা ছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে, রিকিদের বাড়ি চেনান সোমনাথই।