শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা

০৭:০৩ পিএম, নভেম্বর ১৭, ২০২১

ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা

সামান্য কৃষক কন্যা ছিলেন তিনি। ক্ষেতমজুরের কাজ করে কাটত দিন, চলত সংসার। তবে স্বপ্নকে মরতে দেননি কখনও। চেয়েছিলেন বড় হয়ে মায়ের দুঃখ দূর করতে। পরিবারের ভরনপোষণের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে। শুধু তাই নয়, দেশের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতেও চেয়েছিলেন তিনি। আর শুধু চাওয়া নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে সত্যিও করে দেখিয়েছিলেন ওই কন্যে। ক্ষেতমজুর থেকে তিনি আজ দেশের অন্যতম আইপিএস অফিসার।

[caption id="attachment_40293" align="alignnone" width="1000"]ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা /  Image Source: Instagram @ilmaafroz_jaihind ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা /
Image Source: Instagram @ilmaafroz_jaihind[/caption]

উত্তরপ্রদেশের কুন্দারকি গ্রামের বাসিন্দা সেই কন্যের নাম ইলমা আফরোজ। বাবা ক্ষেত মজুরির কাজ করতেন। ইলমার বয়স যখন মাত্র ১৪, তখনই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা। একা মায়ের কাঁধে এসে পড়ে সংসারের ভার। ইলমার এক ছোট্ট ভাইও ছিল। তাই কিশোরী মেয়ে ও ছোট ছেলের ভরনপোষণের জন্য বাধ্য হয়ে স্বামীর মতোই ক্ষেতমজুরির কাজ বেছে নেন ইলমার মা। সে সময় কিশোরী ইলমাও মাকে সাহায্য করতে ক্ষেত মজুর হিসেবে কাজ শুরু করে। সঙ্গে চলত পড়াশোনাও।

পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন ইলমা। কুন্দারকিতেই স্কুলের পাঠ শেষ করে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দিল্লিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে দর্শন নিয়ে পড়ার ভর্তির আবেদন করেছিলেন ইলমা। যদিও সেসময় পাড়ার লোক তাঁর মাকে বুঝিয়েছিল, মেয়েকে তো শেষ পর্যন্ত সংসারই করতে হবে। এত পড়াশোনা করানোর দরকারই বা কী! কিন্তু সে কথায় কান দেননি ইলমা। চলে আসেন দিল্লিতে। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেওছেন যে, দিল্লির কলেজে ভর্তি হওয়াই তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। কুন্দারকির ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোতে ওই একটি সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছিল।

[caption id="attachment_40294" align="alignnone" width="1000"]ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা /  Image Source: Instagram @ilmaafroz_jaihind ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা /
Image Source: Instagram @ilmaafroz_jaihind[/caption]

দিল্লিতে পড়াকালীনই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ স্কলারশিপে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন মেধাবী ইলমা। কিন্তু অক্সফোর্ডে যাওয়ার জন্য সে সময় তাঁর কাছে বিমান ভাড়ার টাকা ছিল না। অবশেষে সাহায্যের জন্য গ্রামের মানুষের দ্বারস্থ হন। গ্রামেরই এক কাকা এরপর ইলমাকে বিদেশ পড়তে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। লন্ডনে অক্সফোর্ডে স্নাতকোত্তর পড়ার পাশাপাশিই প্যারিসেও পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন ইলমা। পড়াশোনা শেষে নিউ ইয়র্কে বড় চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু তা করেননি তিনি। বরং সংসারের দায়িত্ব নিতে বিলাসবহুল আর আরামদায়ক জীবনের হাতছানি পেরিয়েও মাত্র ২৩ বছর বয়সে দেশে ফিরে আসেন।

ইলমার যুক্তি ছিল, তিনি যা করবেন দেশে থেকে দেশের জন্য করবেন। তাঁর কাজের উপর অধিকার শুধু দেশের মাটিরই। মাটির টান তিনি কোনওদিন ভুলতে পারবেন না। দেশে ফিরে ইলমা ঠিক করেন ইউপিএসসি-র জন্য প্রস্তুতি নেবেন। কঠোর পরিশ্রম করে নিজে লক্ষ্যে স্থির থেকে ২০১৭ সালে ইউপিএসসি-তে উত্তীর্ণও হন। সেসমত গোটা দেশে ২১৭ র‍্যাঙ্ক করেছিলেন ইলমা। পরে পছন্দের বিভাগ বেছে নেওয়ার সময় ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসকেই বেছে নেন তিনি। ২০১৮ সালে যোগ দেন আইপিএস অফিসার হিসাবে। দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

[caption id="attachment_40295" align="alignnone" width="1000"]ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা /  Image Source: Instagram @ilmaafroz_jaihind ক্ষেতমজুর থেকে বিদেশে পাড়ি! অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আইপিএস কৃষক-কন্যা /
Image Source: Instagram @ilmaafroz_jaihind[/caption]

অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি ইলমা। আইপিএস অফিসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি 'হোপ' নামে ছোটদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চালান৷ সেই সংস্থার কাজ ছোটদের স্বপ্নে উড়ান দেওয়া৷ তাদের স্বপ্নপূরণে বাধা না আসে তা নিশ্চিত করা। দেশের আগামী প্রজন্মের কাছে ইলমা এক অনুপ্রেরণার নাম। আর তাদের প্রতি ইলমার বার্তা, "দেশের জন্য কাজ করে দেশের সাফল্যের কারণ হওয়ার চেষ্টা করো। দেশের জন্য পরিশ্রম করো। দেশকে ভালবেসে কাজ করো।" নিজের অদম্য জেদ ও স্বপ্ন পূরণের হদিশ তিনি আগামী প্রজন্মের কাছে এভাবেই পৌঁছে দিতে চান।