বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

‘দরিদ্র ও চরম অসাম্যের দেশ’ ভারত! কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিশ্ব রিপোর্টে ধরা পড়ল করুণ চিত্র

১২:০৯ পিএম, ডিসেম্বর ৮, ২০২১

‘দরিদ্র ও চরম অসাম্যের দেশ’ ভারত! কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিশ্ব রিপোর্টে ধরা পড়ল করুণ চিত্র

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ দরিদ্র এবং চরম অসাম্যের দেশ ভারত। ‘আচ্ছে দিন’ আর ‘সবকা বিকাশ’-এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে এমনটাই দাবি করা হয়েছে ‘ওয়র্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাব’-এর পেশ করা বিশ্ব অসাম্য রিপোর্টে।

সম্প্রতি দারিদ্র, অর্থনৈতিক অসাম্য ও লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের প্যারিস স্কুল অফ ইকোনোমিক্স-এ অবস্থিত ‘ওয়র্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাব’। এই রিপোর্ট তৈরিতে অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি ও সংস্থাটির সহ-পরিচালক লুকাস চান্সেল। উল্লেখ্য, রিপোর্টের মুখবন্ধে নোবেলজয়ী দুই অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডাফলো লিখেছেন, বিশ্বের যে সব দেশে অসাম্য চরমে, ভারতও এখন এর অন্তর্ভুক্ত।

এই রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর করোনা অতিমারির কারণে বৈশ্বিক রোজগার অনেক কমেছে। ধনী দেশগুলির অর্ধেক আয় কমেছে এবং অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিতে বাকি অর্ধেক কমেছে। এটার কারণ হল দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিমারির প্রভাব। বিশেষত, ভারতে।

নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের ভাঁড়ারে ‘সম্পদ কুক্ষিগত’ হওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরে বিশ্ব অসাম্য রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, ২০২১ সালের হিসেবে ভারতের এক শতাংশ মানুষের হাতে জাতীয় আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগ সম্পদ রয়েছে। ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক সংস্কারে লাভবান হয়েছে উক্ত এক শতাংশ ধনিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত মানুষ। কিন্তু ভারতের নীচের সারির অর্ধেক মানুষের হাতে দেশের সম্পদের মাত্র ১৩.১ শতাংশ রয়েছে। অর্থাৎ ধনীরা অত্যন্ত ধনী। এবং দরিদ্র শ্রেণির সম্পদ আরও কমছে। কজেই দরিদ্র মানুষের দারিদ্রতা আরও প্রকট হয়েছে।

রিপোর্টে সাফ উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ ভারতের মোট জাতীয় আয়ের ৫৭ শতাংশ রোজগার করে। নীচের সারির ৫০ শতাংশ অর্থাৎ গরিব-নিম্ন মধ্যবিত্তদের দেশের মোট আয়ের ১৩ শতাংশ নিয়েই জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মধ্যবিত্তরা আদতেই গরিব। যাঁদের গড় সম্পদ মাত্র ৭ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৩০ টাকা যা দেশের মোট আয়ের ২৯.৫ শতাংশ মাত্র। সেই তুলনায় দেশের প্রথম সারির ১০ শতাংশ এবং শীর্ষের ১ শতাংশ ভারতের ৬৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ আয় করে।

অন্যদিকে, এই রিপোর্টে এও উল্লেখ্য করা হয়েছে যে, ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যও চরমে। মোট আয়ের মহিলা শ্রমিক-কর্মীদের ভাগ মাত্র ১৮ শতাংশ। এই হার গোটা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে কম। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতেই মহিলাদের আয়ের ভাগ ১৫ শতাংশ। চিন বাদ দিয়ে এশিয়ার দেশগুলিতে এর হার ২১ শতাংশ। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, করোনা মহামারী ও কেন্দ্রের অর্থনৈতিক সংস্কার যেমন বেসরকারিকরণের জেরে আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে। দ্রুত নীতি পালটে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও চরম রূপ ধারণ করবে।