বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ভিক্ষা করেও বোর্ড পরীক্ষায় ৬৩%! আগ্রার বস্তির আলির চোখে এখন ‘অগ্নিবীর’ হওয়ার স্বপ্ন

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২, ০৬:০৪ পিএম | আপডেট: জুন ২৫, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ভিক্ষা করেও বোর্ড পরীক্ষায় ৬৩%! আগ্রার বস্তির আলির চোখে এখন ‘অগ্নিবীর’ হওয়ার স্বপ্ন
ভিক্ষা করেও বোর্ড পরীক্ষায় ৬৩%! আগ্রার বস্তির আলির চোখে এখন ‘অগ্নিবীর’ হওয়ার স্বপ্ন

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। পথে পথে ভিক্ষা করে ও কাগজ কুড়িয়েই কোনওরকমে অন্নসংস্থান হয়। ঘিঞ্জি বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ৮×৮ ফুট ঘরেই বসবাস আগ্রার শের আলির। ছোট থেকে আট ভাই-বোন বড় হয়েছেন অত্যন্ত কষ্ট করে। এত কিছুর মাঝেও আলির চোখে এখন ‘অগ্নিবীর’ হওয়ার স্বপ্ন। দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় নজরকাড়া রেজাল্টও করেছেন তিনি। ওই বস্তির ৪০টি পরিবারের কাছে হয়ে উঠেছেন ‘রোল মডেল’।

ছোট থেকেই সংসারে নিত্য অভাব। তা সত্ত্বেও পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ এতটুকু কমেনি। ছোট থেকে যেখানে বড় হয়ে ওঠা, সেখানে প্রত্যেকে কাগজ কুড়িয়েই সংসার চালান। ওই পরিবারগুলির মধ্যে শিক্ষার আলো এখনও পৌঁছয়নি। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম শের আলি। কষ্ট করে হলেও চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা। জীবনযুদ্ধে থেমে থাকতে একেবারেই নারাজ ভবিষ্যতের ‘অগ্নিবীর’।

পড়াশোনার প্রতি আলির প্রবল আগ্রহ নজর কেড়েছিল এক সমাজকর্মী নরেশ পরসের। তিনি আলিকে স্কুলে ভর্তি করার যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যে পরিবেশে আলি বড় হয়ে উঠেছেন সেখানে থেকে পড়াশোনা করা এক প্রকার অলীক স্বপ্ন বলা যেতে পারে। তবুও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। মিলেছে প্রচেষ্টার ফলও। দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় বেশ ভালো নম্বর পেয়েই উত্তীর্ণ হয়েছেন আগ্রার শের।

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আলি জানিয়েছেন, তিনি যে বস্তিতে বড় হয়েছেন সেখানে প্রত্যেকে কাগজ কুড়িয়েই সংসার চালান। একদম অল্প বয়স থেকেই ছেলেমেয়েরা শুরু করেন কাগজ কুড়োনোর কাজ। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি যে কোনওদিন পড়াশোনা করতে পারবেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল বলেই দেখা হয় নরেশ পরসের সঙ্গে। শুরু হয় পড়াশোনার জীবন। একের পর এক ক্লাস উত্তীর্ণ হয়ে এই বছর ৬৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তরপ্রদেশের দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় পাশ করেন আলি। ইংরেজিতে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ১০০-র মধ্যে ৮০।

তবে  বস্তির ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জগতে নিয়ে আসার লড়াইটা খুব একটা সহজ ছিল না নরেশ পরসের কাছে। শিক্ষার গুরুত্ব যে কতটা তা অভিভাবকদের বোঝাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতেন নরেশ। পরে বাবা-মা রাজি থাকলেও রাস্তার ভিক্ষুকদের স্কুলে ভর্তি করতে অসম্মত হন ওই বস্তি লাগোয়া এক সরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল। তাঁর দাবি, বস্তির ছেলে-মেয়েরা ভীষণ অপরিচ্ছন্ন। তাই তাদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। অতঃপর শুরু হয় পরশের নতুন লড়াই। হাজার চেষ্টার পর অবশেষে ২০১৪ সালে অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর (বেসিক এডুকেশন) গিরিজেশ চৌধুরীর সাহায্যে ৩৬ জন ছাত্রছাত্রীর নাম নথিভুক্ত করতে সক্ষম হন তিনি। শের আলি তাদেরই মধ্যে একজন।

ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা রঙ্গি আলি। তিনি বলেন, “অনেক কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেছে আমার ছেলে। আমাদের বস্তির সব বাচ্চার কাছে আলিই এখন অনুপ্রেরণা।” ছেলের কৃতিত্বে আলির মা শাহবিন বলেন, “খাওয়া জোটেনি কোনও কোনও দিন, কিন্তু আলি পড়াশোনা এক দিনের জন্য বাদ দেয়নি। কোনও কোনও দিন রাতে শুধু জল খেয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। ওর চোখে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন।”

তবে কেবল পড়াশোনা নয়, আলির রয়েছে আরও অনেক গুণ। অ্যাথলিটেও জেলা এবং রাজ্যস্তর থেকে জিতেছেন একাধিক পদক। পাশাপাশি অভিনয় ও নৃত্যকলাতেও তিনি সমান পটু। ইতিমধ্যেই চারটি নাটকে অভিনয় ও ‘তাজ মহোৎসব’-এর মত অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেছেন তিনি। তাঁর উপরে আবার দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় এত ভালো ফল। আলি জানিয়েছেন, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট তাঁর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তীকালে তিনি সেনায় যোগ দিতে চান। ‘অগ্নিবীর’ হয়ে দেশ সেবায় নিযুক্ত হতে চান শের আলি।