বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি বিজেপি সাংসদ জন বার্লার! উত্তরে কী বললেন সুখেন্দুশেখর?

১০:১২ পিএম, জুন ১৯, ২০২১

উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি বিজেপি সাংসদ জন বার্লার! উত্তরে কী বললেন সুখেন্দুশেখর?

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলাভাগের দাবি জানালেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। শনিবার আলিপুরদুয়ারের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে দলের কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে এসে, বিজেপির সাংসদ জন বার্লা বাংলাভাগের দাবি তোলেন। উত্তরবঙ্গকে বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। এমনটাই বলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ। তিনি বলেন, এটা এখানকার মানুষের দাবি, শুধু তাঁর একার কথা নয়। তিনি জানিয়েছেন, সাংসদ অধিবেধশন শুরু হলেই, এই দাবি তুলবেন তিনি। 

তিনি জানান, এনিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও যাবেন। পাশাপাশি রাজ্য দলের নেতাদেরও বোঝাবেন। তিনি দাবি করেছেন, করোনা এবং লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই, উত্তরবঙ্গের মানুষদের নিয়ে দিল্লি যাবেন। তবে, রাজ্য বিজেপি নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ নিয়ে জন বার্লা যা বলেছেন, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। দল সাফাই দিলেও, জন বার্লার বক্তব্যের পর, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দলের অনুমোদন ছাড়া একজন সাংসদ প্রকাশ্যে কীভাবে একই দাবি নিয়ে বারবার সরব হচ্ছেন? এদিকে, বিজেপি সাংসদ জন বার্লার মন্তব্যের পরেই, সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের পক্ষ থেকে  এই বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোনোভাবেই বাংলা ভাগ হতে দেওয়া যাবে না।

উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে একটি নেপালি ভাষার স্থানীয় পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তরবঙ্গের জন্য পৃথক স্বত্ত্বার দাবির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ৷ এদিন সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জন বার্লা ফের বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে কেউ গ্রেটার কোচবিহার, কেউ কামতাপুরী, কেউ আবার গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব হচ্ছেন৷ কেউ যাতে আঘাত না পান, তার জন্য আমি গোটা উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার প্রস্তাব দিয়েছি৷’

জন বার্লার আরও যুক্তি, জাতীয় নিরাপত্তার কথা ভেবেই একথা বলেছেন তিনি৷ বিজেপি সাংসদ অভিযোগ করেছেন, অসম থেকে নেপাল পর্যন্ত গোটা জাতীয় সড়কের দু'পাশে বেআইনিভাবে বসবাস শুরু করছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা৷ সাংসদের দাবি, তাঁদেরকে আধার কার্ড, রেশন কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে৷ জন বার্লার আরও অভিযোগ, রোহিঙ্গারা পরিচয়পত্র পেয়ে যাচ্ছে, অথচ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এখনও পর্যন্ত রেশন কার্ড, আধার কার্ড করতে পারছেন না৷

বিজেপি সাংসদের এও অভিযোগ করেছেন, ২ মে ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে যেভাবে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটছে, তাতে নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা৷ তাঁর দাবি, পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না৷ তিনি অভিযোগে বলেন, ‘একদিকে নেপাল, একদিকে বাংলাদেশ, অন্যদিকে ভুটান এবং আর একদিকে চিন৷ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলে আমরা সুরক্ষিত থাকব৷ বিশেষত ২ মে-র পর থেকে যে ঘটনা ঘটছে, তাতে এখানকার মানুষই এই দাবি তুলছেন৷ কারণ কেউ সুরক্ষিত নন৷ তাঁরাই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ, ডিএম, এসপি কেউ আমাদের কথা শুনছেন না৷ আমরা কোথায় যাবো?’

এদিন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদের বাংলাভাগের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেন তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি সংবাদমাধ্যমে এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বলেন যে, ‘যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন বাংলাকে ভাগ হতে দেব না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও বাংলা ভাগের চেষ্টা হয়েছে। বিজেপি বাংলাকে ভাগ করতে চাইলে, মানুষ রক্ত দিয়ে তা আটকাবে৷ বাংলা যদি ভাগ করতে চান, উত্তরপ্রদেশকেও ৪ ভাগে ভাগ করতে হবে বলে দাবি উঠেছে। সেটা করবে তো বিজেপি? অন্যান্য আরও রাজ্য ভাগের দাবি উঠেছে, সে বিষয় বিজেপি কী ভাবছে আগে বলুক। অসমে বোরোল্যান্ডের দাবিও মানুক কেন্দ্রীয় সরকার৷ মহারাষ্ট্র এবং গোয়াকে নিয়ে কোঙ্কন রাজ্য গঠনের দাবি উঠেছে৷ মোদি-শাহের রাজ্য গুজরাতে সৌরাষ্ট্রকে পৃথক রাজ্য ঘোষণার দাবি উঠেছে৷ এই দাবিগুলি নিয়ে বিজেপি-র কী অবস্থান সেটা আগে ভারতবর্ষের মানুষকে তারা জানাক৷’

বার্লার ওই মন্তব্যের পর বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে দেখাক বিজেপি। একসময় জন বার্লা মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে, পুলিসের গাড়ি পুড়িয়ে, এলাকায় সন্ত্রাস চালাতেন। তিনি আবার উত্তরবঙ্গের মানুষের ভালোর কথা বলছেন।’

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি জন বার্লার এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘বিজেপি সাংসদ জন বার্লার মন্তব্য একেবারেই সাম্প্রদায়িক। বাংলাভাগের এই দাবি রাজ্যের সঙ্কট। এই ধরনের প্রচেষ্টা আটাকানো দরকার।’ সব মিলিয়ে জন বার্লার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছে।