বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলায় ‘ভোট পরবর্তী অশান্তি’ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট দিল এই নির্দেশ!

০১:৩৩ পিএম, আগস্ট ১৯, ২০২১

বাংলায় ‘ভোট পরবর্তী অশান্তি’ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট দিল এই নির্দেশ!

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি বলা হয়েছে, আদালতের তদারকিতেই তদন্ত করবে সিট। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট মেনে, সিট গঠন করা হবে। রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। এক্ষেত্রে অবশ্য রাজ্যের আইপিএসদের নিয়েই সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। জানা গিয়েছে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র, সুমন বালা সাহু, রণবীর কুমার এই ৩ আইপিএসকে নিয়ে সিট গঠন করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায় রাজ্য সরকারের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজ্য সরকার যদিও প্রথম থেকে বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার কথা অস্বীকার করছিল। এদিন আদালত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেই মান্যতা দিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হলেও, গোটা বিষয়টিতে নজর রাখবে আদালত। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ, দুর্নীতি ও বিতর্ক এড়াতে টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিতে হবে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, খুন, ধর্ষণের মামলায় তদন্ত করবে সিবিআই। বাকি অশান্তির মামলায় তদন্ত করবে সিট। কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নজরদারিতে কাজ করবে সিট। সেই রিপোর্টও ছ’সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে।

এদিন এই রায় প্রসঙ্গে মামলাকারী আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস বলেন, ‘আমি যখন এই মামলা ফাইল করেছিলাম, তখন গোটা পশ্চিমবঙ্গ অগ্নিগর্ভ। প্রথম শুনানি হয়েছিল মে মাসের ৭ তারিখ। তখন পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ গঠিত হয়। রাজ্য প্রথম থেকে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে। বিভ্রান্ত করে সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আজ রায় প্রকৃত বিষয়টা স্পষ্ট করে দিল। সিবিআই তদন্ত নিয়ে পাঁচ বিচারপতি এক মত দিয়েছেন। একটি বিষয়ে চার বিচারপতির একমত।’

আইনজীবী আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘জাজমেন্টটা এখনও হাতে পায়নি। তবে, যতটুকু মনে হচ্ছে, রিপোর্টে এনএইচআরসি যে তথ্য, অভিযোগগুলো তুলে ধরেছে, সেগুলি সিবিআই তদন্ত করবে। এখনও যা অভিযোগ নথিভুক্ত হয়নি, অথচ মানুষ অভিযোগ জানাতে উদ গ্র ী, তা সিট তদন্ত করবে।’ আদালতের রায় ঘোষণার পর আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, ‘সত্যমেব জয়তে… আদালতের পর্যবেক্ষণ সিবিআই প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করুক। পুলিশ সঠিক তদন্ত করছে না। কারণ পুলিশের বিরুদ্ধেই বেশিরভাগ অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গে হিংসা হয়েছে, এটা প্রমাণিত হল।’

আদালতের রায়ে স্বভাবতই খুশি বিজেপি নেতৃত্ব। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, হিংসা হচ্ছে। এনএইচআরসি-র রিপোর্টে কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই, সেটা আদালতের রায়েই প্রমাণিত হল। এবার নির্যাতিত, নিগৃহীতরা বিচার পাবেন। যাঁরা দোষী, তাঁরা শাস্তি পাবে। পুলিশের সামনে গাড়ি ভেঙেছে, আমাদের মেরেছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। কোর্ট একে মান্যতা দিয়েছে।’

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সৌগত রায় বলেন, ‘হাইকোর্ট যখন রায় দিয়েছে তা মানতে হবে। তবে, সিবিআইকে তদন্ত করতে বলা মানে, রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে বা সাংবিধানিক বেঞ্চে যেতে পারে বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। আমার বিশ্বাস রাজ্য সরকার সব ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে।’

আবার তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি NHRC-র রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে হাইকোর্ট নিয়ে এখন কোনও মন্তব্য করছি না।’

https://twitter.com/KunalGhoshAgain/status/1428240539275591682

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর হামলার অভিযোগ তোলে রাজ্য বিজেপি। এরপর ভোট পরবর্তী হিংসা এবং অশান্তি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয়। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদারকে নিয়ে গঠিত পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ৷

মামলা শুরু হলে, আদালতের নির্দেশে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাত সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠিত হয়। রাজ্যে এসে ভোট পরবর্তী অশান্তির বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখে ওই দল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে, কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা। সেই রিপোর্টে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে অভিযুক্ত করা হয় এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। একাধিক মন্ত্রী-সহ শাসকদলের নেতাদেরও রিপোর্টে অভিযুক্ত করা হয়৷ যদিও এই রিপোর্ট মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। রাজ্যের শাসকদলের দাবি, এই রিপোর্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরপর আজকের এই রায়ে, রাজ্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।