শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৭ ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করা হল শিশুকে, তবে শেষরক্ষা হল না! আহিরীটোলায় বাড়ি ধসে মৃত ২

০১:৩২ পিএম, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

৭ ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করা হল শিশুকে, তবে শেষরক্ষা হল না! আহিরীটোলায় বাড়ি ধসে মৃত ২

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ফের নিম্নচাপের জেরে কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই কাল রাত থেকেই হচ্ছে বৃষ্টি। এর মধ্যেই আজ সকালে একটানা বৃষ্টিতে নয়া বিপর্যয় ঘটল। আহিরীটোলায় ভেঙে পড়ল পুরনো বাড়ি। এর জেরে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে এক তিন বছরের শিশু-সহ ২ জনের। শিশু ছাড়াও মৃত্যু হয়েছে বছর ৫২-র এক প্রৌঢ়ার। সাত ঘণ্টা ধরে চেষ্টার পর উদ্ধার করা হয় তাঁদের। সেই সময় বাইরে দাঁড়িয়ে চোখের জলে অপেক্ষা করছিলেন ওই শিশুর বাবা-মা। তাঁদের আশা ছিল সব ঠিক হবে। বেঁচে যাবে তাঁদের আদরের সন্তান। ৭ ঘণ্টার চেষ্টায় ওই তিন বছরের শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, শেষরক্ষা করা গেল না। এতো সময় ধরে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত হার মানল ওই একরত্তি। উদ্ধারের পর তাঁকে তড়িঘড়ি আরজিকর হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধার।

এদিকে জানা গিয়েছে, চার জন মূলত একেবারে ভিতরের দিকে আটকে পড়েছিলেন। উদ্ধার হওয়া দুজনকে আরজিকর বাকি দুজনকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গঙ্গা ঘড়াই নামে ন’মাসের এক অন্তঃসত্ত্বাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁরও অস্ত্রোপচার হবে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, তাঁর অস্ত্রোপচার চলছে।

জানা গিয়েছে, ইটের স্তুপের নিচে ওই শিশুটি চাপা পড়ে। সাত ঘণ্টার একটানা উদ্ধারের পর তাঁকে চাদরে ঢেকে বাইরে নিয়ে আসা হয়। বাইরে অপেক্ষায় ছিল অ্যাম্বুলেন্স। তাতে করেই আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও বার করে আনার সময়ই স্থানীয়দের সন্দেহ হয়েছিল যে, হয়তো সব শেষ। মাও তখন সন্তানের জন্য কেঁদে আকুল। যদিও উদ্ধারকর্তারা তখন কিছুই জানাননি। কিন্তু পরে সন্দেহই সত্যি প্রমাণিত হয়। হাসপাতালে যেতেই চিকিৎসকরা শিশুটি এবং ওই বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

আজ ভোর বেলাতেই আহিরীটোলায় ওই বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বেরি আসতে পারলেও, আটকে পড়েন চারজন। ২ জনকে প্রথমে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উদ্ধার করা হয় আরও এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে। কিন্তু তখনও আটকে থাকে শিশুটি। সাত ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করা হয়। মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধারও। বাড়ির ভিতরের দিকে আটকে পড়েছিলেন। ফলে তাঁদের উদ্ধার করতে সমস্যায় পড়তে হয় দমকল কর্মী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের। পরে ধ্বংসস্তূপের ভিতরে ঢুকে পড়েন এনডিআরএফ টিমের সদস্যরা। ঘটনাস্থলে যান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও।

স্থানীয়দের কথায়, দোতলা ওই বাড়িটি অনেকদিনের পুরনো। কিন্তু বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিবাদের জেরে বাড়ির দীর্ঘদিন ধরে কোনও সংস্কার হয়নি। এই বাড়িটিতে একসঙ্গে কয়েকটি পরিবারের বাস। ভোররাতে স্থানীয়রা হুড়মুড়িয়ে কিছু ভেঙে পড়ার শব্দ পান। প্রথমে ততটা গুরুত্ব না দিলেও, স্থানীয় দোকানদাররা বিষয়টি দেখতে পান। পড়ে তাঁদের চিৎকারেই স্থানীয়রা ছুটে আসেন। তাঁরা তখন বাড়ির ভেতর থেকেই আটকে পড়াদের আর্তনাদ শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় দমকল এবং পুলিশে। বিপদের গুরুত্ব বুঝে পৌঁছয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ছাড়াও পৌঁছান শশী পাঁজাও। বিপদ বুঝে এলাকায় পৌঁছয় এনডিআরএফ টিমও। এদিকে আজকের এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের দাবি, পুরসভার সতর্কতা আগে শুনলে আহিরীটোলায় এমন ঘটনা ঘটতই না।

জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে আশেপাশের এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এলাকার ব্যারিকেড করে ঘিরে রাখা হয়েছে। এলাকায় মাইকিং চলছে। ১০ নম্বর আহিরীটোলার ওই বাড়িটিকে আগেই বিপজ্জনক বাড়ি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাইন বোর্ড। কিন্তু পুরসভার টাঙানো সেই বোর্ড খুলে ফেলেন বাড়ির বাসিন্দারা।