বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

‘খুন করে ফেলে রেখে দেব, কেউ খুঁজে পাবে না’! হুমকি দেওয়া হয়েছিল অর্জুনকে, এমনটাই দাবি পরিবারের

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: মে ৮, ২০২২, ০৪:৩০ পিএম | আপডেট: মে ৮, ২০২২, ১০:৩০ পিএম

‘খুন করে ফেলে রেখে দেব, কেউ খুঁজে পাবে না’! হুমকি দেওয়া হয়েছিল অর্জুনকে, এমনটাই দাবি পরিবারের
‘খুন করে ফেলে রেখে দেব, কেউ খুঁজে পাবে না’! হুমকি দেওয়া হয়েছিল অর্জুনকে, এমনটাই দাবি পরিবারের

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কাশীপুরের বিজেপির যুবনেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যুর ঘটনা এবার নয়া তথ্য সামনে এল। অর্জুনের মৃতদেহ উদ্ধারের আগের রাতেই তাঁকে সরাসরি খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেই দাবি করেছেন মৃত বিজেপির যুব নেতার মা রেশমি চৌরাসিয়া এবং দাদা। অর্জুনের মৃত্যু ঘিরে ক্রমশ ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে। যেদিন হুমকি দেওয়া হয়, সেদিন অর্জুন বাড়ি ফেরেননি। পরের দিন সকালেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। 

এই প্রসঙ্গে অর্জুনের মা এবং দাদার দাবি, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাশীপুর রেল কলোনিতে তাঁদের বাড়ির কাছে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ওই ধরনের গাড়ি, অতো গভীর রাতে তাঁরা আগে কখনও তাঁদের এলাকায় দেখেননি বলেও জানিয়েছেন। এলাকার স্থানীয় একটি সিসিটিভি ফুটেজেও ওই গাড়িটিকে দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এই রহস্যজনক গাড়ির সেই সময় অর্জুনের বাড়ির কাছে উপস্থিতি নিয়ে ক্রমশ ধোঁয়াশা বাড়ছে।

গাড়ি আসার পর, সেখানে কিছু কথা কাটাকাটিও হয়। সে সময় বিজেপির যুবনেতা অর্জুন বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর কে বা কারা তাঁকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। এই প্রসঙ্গে অর্জুনের মা জানিয়েছেন যে, ‘ওই দিন বাড়িতে শোয়নি অর্জুন। দরকারে বাড়িতে এসেছিল। আবার তাড়াতাড়ি চলে যায়। তখন বাড়ির সামনে একটা জটলা শুনি। তবে কাউকে চোখে দেখিনি। কিন্তু আমি নিজের কানে শুনেছি, কেউ বলছে, তোকে মেরে এমন জায়গায় ফেলে দেব কেউ খুঁজে পাবে না। এতোটুকুই শোনা যায়। এরপরই আমরা ছেলেকে খুঁজতে শুরু করি। সারারাত ওকে খুঁজি। থানায় যায়। কিন্তু পুলিশ কোনও সহযোগিতা করেনি। যেদিন ওই কথা শুনি সেদিনই এই ঘটনা যদি না ঘটত তাহলে হয়তো কিছু মনে হত না।’  

এদিকে, পরের দিনই অর্থাৎ শুক্রবার সকালে রেলের পরিত্যক্ত আবাসন থেকে উদ্ধার হয় অর্জুনের ঝুলন্ত দেহ। যা নিয়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। শুক্রবারই তৃণমূল কংগ্রেসকে অপরাধীর কাঠগড়ায় তুলে খুনের অভিযোগ এনেছিলেন রাজ্য বিজেপির পাশাপাশি খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি পরে মৃত অর্জুনের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন। এদিকে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব সিবিআই তদন্তের দাবিও জানিয়েছে এই ঘটনায়। 

এদিকে, মৃতদেহ উদ্ধারে গেলে পুলিশকে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। পরে একপ্রকার জোর করেই মৃতদেহ আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। কিন্তু হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে মৃতের মা প্রথমে ময়নাতদন্ত বন্ধের আর্জি জানান। বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টে যান এবং হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে আরজিকর হাসপাতালে অর্জুনের দেহ ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা থাকলেও, রাজ্যের ওপর ভরসা ছিল না মৃতের পরিবারের। একথা পরিবারের আইনজীবী আগেই জানিয়েছিলেন আদালতে। এমনকি রাজ্য প্রশাসনের অধীনে থাকা কোনও হাসপাতালের ওপরই আস্তা রাখতে পারেননি অর্জুনের পরিবারের সদস্যরা। সেই মতই কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।

তবে, অর্জুনের পরিবার এবং পদ্ম শিবির খুনের তত্ত্ব খাড়া করলেও, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, অন্য কথা। শনিবার কম্যান্ড হাসপাতালের প্যাথোলজি ও ফরেন্সিক মেডিসিনের চিকিৎসক হেমন্ত ও চিকিৎসক জসবিন্দরের তত্ত্বাবধানেই চলে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া। সেখানে পরিবারের লোকও উপস্থিত ছিলেন, ভিডিওগ্রাফিও হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে খুনের প্রমাণ মেলেনি বলেই খবর। এমনকি দেহে ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্নও মেলেনি বলেও জানা গিয়েছে।

এবার অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যুর আগের রাতে এলাকায় রসহ্যজনক গাড়ির উপস্থিতি এবং হুমকির ঘটনায় নতুন করে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। মৃতের দাদা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা এই সব বিষয় পুলিশকে জানিয়েছে। তাঁদের রাজ্য সরকারের পুলিশের উপর ভরসা রয়েছে। এখনই তাঁরা সিবিআই তদন্ত নিয়ে কিছু ভাবছেন না। রাজ্য পুলিশের তদন্তে কী সামনে আসে তারই অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।