বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

রানুর লড়াইয়ের পাশে এবার মুখ্যমন্ত্রী! রেনুকে দেওয়া হবে উপযুক্ত কাজ, জানালেন মমতা

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২, ০৬:২২ পিএম | আপডেট: জুন ৯, ২০২২, ১২:২২ এএম

রানুর লড়াইয়ের পাশে এবার মুখ্যমন্ত্রী! রেনুকে দেওয়া হবে উপযুক্ত কাজ, জানালেন মমতা
রানুর লড়াইয়ের পাশে এবার মুখ্যমন্ত্রী! রেনুকে দেওয়া হবে উপযুক্ত কাজ, জানালেন মমতা

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সদ্য নার্সিংয়ের চাকরি পেয়েছিলেন কেতুগ্রামের রেনু। কিন্তু স্বামীর হামলায় ডান হাত কেটে বাদ যাওয়ায় সেই চাকরিতে যোগ দেওয়া এক প্রকার প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে যায়। এই অবস্থায় তরুণীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, সরকারের পক্ষ থেকে রেনুর কৃত্রিম হাত লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ এবং তাঁকে উপযুক্ত কাজও দেওয়া হবে।

এদিন ভগবানপুরে খুন হওয়া দম্পতির বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “ওর জন্য তিনটে কাজ করছি। এক, ও যে কাজটা করতে পারবে সেই কাজটাই ওকে করতে দেওয়া হবে। দুই, যে হাতটা কেটে দিয়েছে সেখানে আর্টিফিশিয়াল হাতের ব্যবস্থা করব। তিন, ও যেখানে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিল সেখানে ৫৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি সেটা আমরা দিয়ে দেব।” স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। কেন এমনটা ঘটেছে তা খবর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিবকে।

শনিবার রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর রেনুকাকে ভর্তি করা হয় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এরপর পুরো বিষয়টিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আবেদন জানান তিনি। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নেন সেই দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা রাজ্য। অবশেষে লড়াকু রেনুর পাশে দাঁড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে অভিযুক্ত স্বামী শরিফুল ও তাঁর বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, স্ত্রীর হাত কেটে নেওয়ার জন্য সুপারি লাগিয়েছিলেন শরিফুল।

২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে শরিফুলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রেনু খাতুন। নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ শেষ করে রেণু প্রথমে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে সম্প্রতি পরীক্ষায় পাশ করে প্যানেলভুক্ত হওয়ার পর একটি সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পান তিনি। কেবল চাকরিতে যোগ দেওয়াই বাকি ছিল। স্ত্রী সরকারি চাকরি পেয়ে যাওয়ায় হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন তিনি। যে কোনও মুহূর্তে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে স্বামীকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন রেণু, এই আশঙ্কা ক্রমশই গ্রাস করতে থাকে শরিফুলকে। এরপরই দুই সুপারিকে দিয়ে স্ত্রীর ডান হাতের কব্জি কেটে নেন তিনি।

এত কিছুর পরেও দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বেডে শুয়েই নতুন লড়াই শুরু করেন রেনু। জীবনযুদ্ধে হার না মানার মানসিকতাকে সঙ্গী করে নতুন পথচলা শুরু করেন। বাঁ হাত দিয়েই শুরু করেন লেখালিখি। সরকারি নার্সিংয়ের চাকরি তিনি করবেনই। তাই ডান হাতের কব্জি বাদ গেলেও, যাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় পিছু হটতে না হয়, তাঁর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেন রেনু।

অন্যদিকে আশার আলো দেখিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনও। মঙ্গলবারই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে রেণুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্ত নিয়োগে বিবৃতি দিয়ে জানান, সুস্থ হওয়ার পর চাকরি পেতে তাঁর যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা হবে। তবে রেনুর প্রতিবন্ধকতা ঠিক কতটা তা দেখা হবে। এখন কেবল রেনুর সুস্থ হয়ে ওঠার অপেক্ষা।