শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

‘আমরা চাই না রক্ত ঝরুক, কেউ খুন হোক; দোষীরা ছাড় পাবে না’! বৃহস্পতিবার বগটুই যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২২, ০৩:৪৪ পিএম | আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২২, ০৯:৪৪ পিএম

‘আমরা চাই না রক্ত ঝরুক, কেউ খুন হোক; দোষীরা ছাড় পাবে না’! বৃহস্পতিবার বগটুই যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
‘আমরা চাই না রক্ত ঝরুক, কেউ খুন হোক; দোষীরা ছাড় পাবে না’! বৃহস্পতিবার বগটুই যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রামপুরহাটকাণ্ডে জল অনেকদূর গড়িয়েছে। বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার হাইকোর্টে কাজ শুরু হওয়ার পরই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং সরকারি কৌঁসুলিকে এজলাসে ডাকেন প্রধান বিচারপতি। সেখানেই তাঁদের জানিয়ে দেন যে, রামপুরহাটের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করার বিষয়টি।

এদিকে, বীরভূমের রামপুরহাটে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারী বগটুই গ্রামে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, বুধবার অর্থাৎ আজই তিনি যেতেন। কিন্তু সেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যরা হাওয়ায় তিনি বুধবার যাবেন না। পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন যে, ‘সরকার কখনও চায় না রক্ত ঝরুক। কখনও চাই না কেউ খুন হোক। যারা সরকারে থাকে না তারা চক্রান্ত করে যাতে সরকারের বদনাম হয়। রামপুরহাটের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ ছাড়া পাবে না।’

শুধু এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের আক্রমণ করাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় অন্যান্য বিজেপিশাসিত রাজ্যও ছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ স্বরূপ উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা করি। এখানের থেকে অনেক বেশি ঘটনা উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ,বিহার, রাজস্থানে হয়। এখানে রঙ না দেখে অ্যাকশন নেওয়া হবে।’ তিনি রীতিমতো অভিযোগের সুরে বলেন যে, ‘হাথরাস, উন্নাওতে দল পাঠিয়েছিলাম ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এদিন তখনও রামপুর হাটে পৌঁছাতে পারেনি বিজেপির বিধায়ক দল। দিল্লি থেকেও কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়নি বিজেপির প্রতিনিধি দল। তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন যে, তিনি বগটুই যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই রাজ্যের তরফে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই টিমে রয়েছেন জ্ঞানবন্ত সিং, মিরাজ খালিদ এবং সঞ্জয় সিং এসডিপিও এবং আইসি-র বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজ্যের বিরোধী দলনেত্রি ছিলেন, সেই সময় তিনি যেভাবে দ্রুত কোনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেতেন, সেইভাবেই এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বৃহস্পতিবারই যাচ্ছেন বগটুই গ্রামে। এদিন তিনি বলেন, ‘আজই যেতাম। কিন্তু বিরোধীরা গেছেন। আগামিকাল আমি যাচ্ছি।’

বগটুই এর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রথম থেকেই এর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই তত্ত্বেই মান্যতা দিলেন। ‘আমরা সিপিএম, কংগ্রেসের মতো চক্রান্তকারী দল নই।’ পাশাপাশি বিজেপিকে বিঁধে এও বলেন যে, ‘আসলে দাঙ্গা করতে পারছে না। লোকে খেতে পারছে না, তাও তো বলতে পারছে না। মেয়েরা পড়াশুনা করতে পারছে না, এ কথাও বলতে পারছে না। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না, এ কথা বলতে পারছে না। তাই দেশলাই জ্বালানো খুব সহজ তাই না। দেশলাই জ্বালাতে চক্রান্তকারীদের জুড়ি নেই। কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে, অন্যের ঘরে দেশলাই জ্বাললে নিজের ঘরে এসেও পড়তে পারে। অনেক নষ্টামি, অনেক দুষ্টুমি দেখেছি।’

অন্যদিকে, বগটুই-এর ঘটনাকে কেন্দ্র রাজ্যপাল এবং নবান্নের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার টুইটে রামপুরহাটে অগ্নিকাণ্ড এবং সেই ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যুতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করেন রাজ্যপাল। তিনি টুইটে বলেন, ‘বীরভূমের রামপুরহাটে ভয়ঙ্কর ধরনের হিংসা, অগ্নিসংযোগ, ব্যাভিচারে প্রমাণিত যে, এই রাজ্যে সন্ত্রাসের সংস্কৃতি চলছে, আইনের শাসন নেই। ইতিমধ্যেই আটজনের প্রাণ গিয়েছে। মুখ্যসচিবের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে তথ্য চেয়েছি। শোকগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমবেদনা।’ রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছ থেকে এই নিয়ে রিপোর্ট তলব করেন জগদীপ ধনখড়। 

ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এরপরই পাল্টা চিঠি দেন রাজ্যপালকে। চিঠিতে তিনি জানিয়েছে, রামপুরহাট কাণ্ড নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ্য, করেছেন, ‘আপনি যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক। আপনার মন্তব্য নিরপেক্ষ তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সাংবিধানিক পদে থেকেও এই ধরনের মন্তব্য অসাংবিধানিক। সাংবিধানিক পদে থেকেও এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। বিজেপিশাসিত রাজ্য-সহ দেশের অন্যান্য ঘটনায় আপনি নীরব। বাংলাতে কিছু ঘটলেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আপনার বিবৃতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ এরপর রাজ্যপালও চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে ‘লাট সাহেব’ কটাক্ষ করে বলেন, ‘এখানে বসে রয়েছেন একজন লাটসাহেব। কথায় কথায় বলছে সবচেয়ে খারাপ বাংলা। প্রতিদিন সরকারকে গালাগাল দিচ্ছে।’