শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২২, ০৪:৩১ পিএম | আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২২, ১০:৩১ পিএম

ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রামপুরহাটের বগটুই হত্যাকাণ্ডের পর ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনে এবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আজই এই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচাপতি। সোমবারের মধ্যে রাজ্য পুলিশকে সব প্রয়োজনীয় নথি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাটে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। 

৪৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে বলেও, কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরপর আরও সময় লাগলে, তা বিবেচনা করে দেখা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে হাইকোর্টের তরফে। কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশকে অনেক বড় জয় বলেই উল্লেখ করেছেন কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো। 

কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, অভিযোগকারী এবং মানুষের মনে আস্থা ফেরানোর জন্যই এই নির্দেশ। এই হত্যাকাণ্ডে আইসি’র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার এবং কারও নির্দেশে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগেই আইসিকে ক্লিনচিট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তদন্তের এই পর্যায়ে এসে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও অস্বচ্ছতা বা গাফিলতি রয়েছে এমনটা মনে হচ্ছে না। তবে, কিছু খামতি অবশ্যই রয়েছে।

এদিকে বিচারপতি এও জানান যে, পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠছে। আদালতের পক্ষ থেকে প্রশ্ন, মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগে কীভাবে আইসিকে ক্লিনচিট দেওয়া হল? কেন এখনও মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হল না? এও অভিযোগ উঠছে যে, সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার ফটোগ্রাফি হয়নি। ধৃত কলেবর সিংকেও ট্রানজিট রিমান্ডে আনা হয়নি। আইসি সঞ্জীব ঘোষকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি। তিনি এখনও কর্মরত। এরপরই নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনে আছে মনে করে, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। 

অন্যদিকে, মৃত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর পরিবারের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন যে, রবিবার জেলা পুলিশসুপার আইসি সঞ্জীব ঘোষকে ক্লিনচিট দিয়েছেন। এর হত্যাকাণ্ডকে তাঁরা পারিবারিক বিবাদ বলছেন। সত্য ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছ। আবার রাজ্যের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, পুলিশ সত্য সামনে আনার জন্য সব পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকজঙ্কেই গ্রেফতার করেছে এ পর্যন্ত।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে কান্দু ঝালদা-বাগমুণ্ডি সড়কপথে গোকুলনগরের কাছে আততায়ীদের ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারান ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন। এরপরই কাউন্সিলরের মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে গোটা ঝালদা। খুনের নেপথ্যে ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ জড়িত রয়েছেন বলেই অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু।

এরপর আইসি সঞ্জীবের সঙ্গে নিহত কাউন্সিলরের ভাইপো মিঠুন কান্দুর একাধিক অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যায়। ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপে শোনা গেছে, তপন কান্দু এবং তাঁর স্ত্রী-সহ মোট তিনজনকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য মিঠুনকে বারবার চাপ দিচ্ছেন আইসি সঞ্জীব ঘোষ। আবার অন্য ভাইরাল হওয়া অডিওতে আইসিকে অভিযোগের বয়ান বদলে দেওয়ার কথাও বলতে শোনা যায়। এরপর এই ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভাইপো মিঠুনের কাছে কাতর প্রার্থনা করতেও শোনা যায় ওই আইসিকে। কিন্তু এতো কিছুর পরেও ওই আইসির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ মৃত কংগ্রেস কাউন্সিলরের পরিবারের।

অন্যদিকে, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে যান নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলরের স্ত্রী। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন তপন কান্দু হত্যা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। অবিলম্বে সিটের হাতে থাকা সব নথি সিবিআইকে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। আদালতের এই নির্দেশে স্বাভাবিকভাবেই খুশি নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রী।