শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সাত সকালে হঠাতই বাড়িতে আগুন! কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় প্রাণ বাঁচল ৯৩ বছরের বৃদ্ধার

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: মে ৩, ২০২২, ০৩:৫৬ পিএম | আপডেট: মে ৩, ২০২২, ০৯:৫৭ পিএম

সাত সকালে হঠাতই বাড়িতে আগুন! কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় প্রাণ বাঁচল ৯৩ বছরের বৃদ্ধার
সাত সকালে হঠাতই বাড়িতে আগুন! কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় প্রাণ বাঁচল ৯৩ বছরের বৃদ্ধার

পুলিশ মানুষের বন্ধু। যে কোনও বিপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোই পুলিশের কাজ। সামাজিক বা প্রশাসনিক কাজকর্মই হোক, বা সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত কোনও প্রয়োজন, প্রায়ই পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে দেশ তথা এই রাজ্যের প্রশাসন বাহিনীকে। এবার শহরের বুকে ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধার প্রাণ বাঁচিয়ে ফের একবার মানবিকতা ও সাহসিকতার দৃষ্টান্ত গড়ল কলকাতা পুলিশ।

ঠিক কী ঘটেছিল? কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ শ্যামবাজার পাঁচমাথা মোড়ের কাছেই অবস্থিত আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের উপর এক তিনতলা বাড়ির সিঁড়ি সংলগ্ন একতলায় আগুন লেগে যায়। বাড়িটির একতলায় অবস্থিত একটি দোকানের রান্নাঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই সেই আগুন লাগে। খবর পেয়েই দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে ছোটেন শ্যামবাজার ট্রাফিক গার্ডের ওসি, ইনস্পেক্টর প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও অ্যাডিশনাল ওসি, ইনস্পেক্টর সমীক সেনগুপ্ত। পৌঁছান অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ (ট্রাফিক) পি.আর.কুমার এবং শ্যামপুকুর থানার ওসি, ইনস্পেক্টর পরিতোষ ভাদুড়ী ও অ্যাডিশনাল ওসি, ইনস্পেক্টর দিলীপ সরকারও।

সেখানে গিয়ে দেখা যায় দাউদাউ করে জ্বলছে একতলার রান্নাঘর। পুলিশরা জানতে পারেন, বাড়ির তিনতলায় একা থাকেন ৯৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা, কল্পনা ধর। তাঁর ছেলে থাকেন বিদেশে। বৃদ্ধা হাঁটাচলা করতে পারেন না সুতরাং তিনি যে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসবেন সেই প্রশ্নই নেই। এ কথা শুনেই আর দেরি করেননি শ্যামবাজার ট্রাফিক গার্ডের ওসি, ইনস্পেক্টর প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সিঁড়ি বেয়েই তিনি সোজা উঠে যান তিনতলায়। কিছুক্ষণ পর কল্পনা দেবীকে নিজের পিঠে চাপিয়ে নীচে নেমে আসেন। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কনস্টেবল শ্যামল সিং সর্দার।

এদিকে ততক্ষণে ধোঁয়া এতটাই গাঢ় হয়ে উঠেছে যে চারপাশ দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষান্ত দেননি কলকাতা পুলিশের ওই ওসি, ইনস্পেক্টর। কাপড়ে মুখ ঢেকে যে রান্নাঘর থেকে আগুন লেগেছে সেখানে ঢুকে পড়েন তিনি। যে সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগে, সেটি বাইরেও বের করে আনেন। যাতে বিস্ফোরণ যদি বা ঘটে তাতে যেন বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

ততক্ষণে অবশ্য খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে দমকলের গাড়ি। পরবর্তী পদক্ষেপ এরপর দমকল বিভাগই নেয়। দমকল বাহিনীর প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। স্বস্তির খবর এই ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হননি।

কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে পরে শেয়ার করা হয় এই ঘটনার একটি ভিডিও। সেখানেই তুলে ধরা হয় সম্পূর্ণ বিষয়টি৷ ইতিমধ্যেই এই পোস্টটিকে অজস্র লাইক এবং কমেন্টে ভরিয়ে ফেলেছেন নেটিজেনরা। ওসি, ইনস্পেক্টর প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি এই কর্তব্যপরায়নতা দেখে অজস্র মানুষ স্যালুটও ঠুঁকেছেন। অনেকেই আবার কমেন্টে লিখেছেন, কলকাতা পুলিশের জন্য গর্বিত। এমন কাজকে সকলেই কুর্নিশ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এই প্রথম নয়! এর আগেও একাধিকবার মানুষের বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কলকাতা পুলিশ। বহুবার কলকাতা পুলিশের সাহায্যে প্রাণে বেঁচেছেন অসুস্থ, অসহায় মানুষ। কলকাতার বুকে এভাবেই বারংবার মানবিকতার নজির গড়ে তুলছে তিলোত্তমার পুলিশ বাহিনী।