বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল আজ। পুজোর মুখে শহরবাসীর জন্য বড় উপহার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পুজোর আগেই খুলে গেল উত্তর কলকাতার লাইফলাইন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই উদ্বোধন হল টালা ব্রিজের। এদিন বিকেলে টালা ব্রিজের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্রিজ খুলে যাওয়ায় উত্তর কলকাতা এবং শহরতলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়ে গেল বলা যায়। যদিও এই মুহূর্তে এই ব্রিজ দিয়ে, কোনও বড় গাড়ি বা বাস চলবে না। শুধু ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করবে। বড় গাড়ি চলাচলের অনুমতি পরে দেওয়া হতে পারে বলেই খবর। এদিন টালা ব্রিজের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই বড় ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন জানান যে, উত্তর কলকাতাকে আরও গতিময় করে তুলতে আরও কয়েকটি উড়ালপুল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।
জানা গিয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তৈরি হবে টালা থেকে ডানলপ উড়ালপুল, পাইকপাড়া শিয়ালদহ পর্যন্ত একটি উড়ালপুল এবং এয়ারপোর্ট থেকে যশোর রোড কানেক্টরকে জুড়তে তৈরি হবে আরেকটি উড়ালপুল। এমনই পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। এয়ারপোর্ট পৌঁছতে যানজট এড়াতে আরও একটি উড়ালপুলের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে আরও চারটি এয়ারপোর্ট তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, ইতিমধ্যেই কোচবিহার, অন্ডাল এয়ারপোর্ট তৈরি, মালদা ও পুরুলিয়ার ছররায় আরও দুটি বিমানবন্দরের কাজ শীঘ্রই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
এদিন টালা ব্রিজের উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর দেখেছিলাম কী ভাবে বেহালার মানুষ কষ্ট করেছে। আধঘণ্টার রাস্তা ঘুরে ঘুরে চার পাঁচ ঘণ্টা ধরে যেত। ঠিক তেমনই টালা ব্রিজের জন্যও মানুষকে কষ্ট করতে হয়েছে। চারমাস লেগেছিল এই ব্রিজ ভাঙতে সময় লেগেছি। কোভিডের জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছিল কিন্তু, তা সত্ত্বেও অনেক দ্রুত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ব্রিজ নির্মাণ সংস্থার সমস্ত কর্মী, ইঞ্জিনিয়ারদের ধন্যবাদ জানাই। তাঁদের জন্য এত তাড়াতাড়ি ব্রিজ উদ্বোধন করা সম্ভব হল। স্থানীয় মানুষদের কষ্টের কথা আমি উপলব্ধি করেছি।’
উল্লেখ্য, এদিন সেতুর উদ্বোধনে হাজির ছিলেন রেলের প্রতিনিধিরাও। টালা ব্রিজের উদ্বোধন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, টালা ব্রিজ সংলগ্ন রেলের জমিটি রাজ্য সরকার কিনতে চায় দরিদ্র মানুষজনের মাথার উপর ছাদ তৈরি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। সেই জমি বিক্রিতে রেল যাতে রাজি থাকে, সেই বিষয়ে ডিআরএমের কাছে সেই আবেদন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
টালা ব্রিজের পুনর্গঠনে রেলের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘৪ মাস ধরে ভাঙার কাজ করেছে রেল। পিডব্লুডি-কে বলেছিলাম, তাড়াতাড়ি কাজ করো। ববি-পুলক-অরূপ সবাই খুব সাহায্য করেছে। এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ। তবে শুনেছি স্থানীয়দের কিছু কিছু সমস্যা আছে। পিডব্লুডিকে বলেছি, ২,৩ মাসের মধ্যে সমস্ত কাজ করে দেবে। এই ব্রিজ তৈরির পুরো টাকা রাজ্য দিয়েছে। ভেবেছিলাম, রেল সোশ্যাল ওয়ার্ক হিসেবে টাকা নেবে না। কিন্তু ৯০ কোটি টাকা নিয়েছে রেল।’
এরপরই তিনি মঞ্চে উপস্থিত রেলের ডিআরএম-এর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখানে ১৪৫ টি গরিব পরিবার আছে। রেলের এখানে যে জমি আছে, সেটা কিনতে চাই আমরা। সেই জমিতে এঁদের জন্য বাড়ি বানিয়ে দিতে চাই। কারণ, রাজ্যের এখানে আর কোনও জমি নেই। রেলের জমি না পেলে তাঁদের খালের ধারেই বাড়ি বানিয়ে দিতে হবে। রেলের কাছ থেকে আমরা টাকা দিয়ে জমিটা কিনব, টাকাপয়সার কোনও সমস্যা হবে না।’
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাশ না করায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ রাখা হয়েছিল টালা ব্রিজ। পরবর্তী সময়ে তা ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয় এই ব্রিজ। টালা ব্রিজের নাম হেমন্ত সেতু। প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের ৫ অক্টোবর সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের চেয়ারম্যান প্রয়াত নেতা হেমন্তকুমার বসুর স্মরণে এই ব্রিজের নাম রাখা হয়েছিল হেমন্ত সেতু। এই ব্রিজের নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িয়ে মোট ১৫০০ শ্রমিক এবং তাঁদের ২৪ ঘণ্টার অক্লান্ত পরিশ্রম।
আপনার মতামত লিখুন :