বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

‘পার্থ-কেষ্ট-ববি-অভিষেকও চোর, মমতাও চোর, সবাই চোর আর সাধু কে?’ তীব্র কটাক্ষ মমতার

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০৪:৩৪ পিএম | আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২২, ১০:৩৪ পিএম

‘পার্থ-কেষ্ট-ববি-অভিষেকও চোর, মমতাও চোর, সবাই চোর আর সাধু কে?’ তীব্র কটাক্ষ মমতার
‘পার্থ-কেষ্ট-ববি-অভিষেকও চোর, মমতাও চোর, সবাই চোর আর সাধু কে?’ তীব্র কটাক্ষ মমতার

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মহা সমাবেশ থেকে ফের একবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে মুখ খুলে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো এই সমাবেশ থেকেই। আজ মেয়ো রোডের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমারাও কিন্তু লিস্ট করে রাখছি। কারা তৃণমূলকে বদনাম করছে। পার্থ যদি চোর হয় আইন বিচার করবে। মনে রাখবেন, পার্থও চোর, কেষ্টও চোর, ববিও চোর, অভিষেকও চোর, মমতাও চোর। সবাই চোর আর সাধু কে?’

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, আমার কত সম্পত্তি? এখানে কেন আমার সম্পত্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক কোর্টে মামলা হোক। আমরা ছয় ভাই-বোন। মা যতদিন বেঁচে ছিলেন আমার কাছে থাকতেন। প্রজাদারি জমিতে থাকি আমরা। ৭০ বছর ধরে বাবা থাকতেন। ঠিকা শর্তে রানি রাসমণির জমিতে থাকি আমরা। আমি আর আমার মা থাকতাম। বাকি ভাই-বোনেরা সব নিজেদের আলাদা সংসার, আলাদা বাড়ি। বাকিদের সঙ্গে কেবলমাত্র উৎসবের সম্পর্ক রয়েছে। ১২ বছর ধরে ১ লাখ টাকা করে পেনশন হয়। নিইনি। প্রতি মাসে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পেতাম। এক টাকাও নিইনি। বাইরে গেলে চাও নিজের পয়সায় খাই। সরকারি গাড়ি চড়াও হয় না। ১৯৯১ সালের পর থেকে কোনওদিন এগজিকিউটিভ ক্লাসে চড়িনি। আমি কেন বই বিক্রি করব সেটাও তাঁদের জ্বালা। বাজারে সার্ভে করে দেখুক বইমেলায় বেস্ট সেলার কার বই।’

এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মহা সমাবেশের মঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে যথারীতি আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বলে না তাই? আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম সমাজসেবা করব বলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে কালি লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্থ-ববির ব্যাপার হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে আনবে। ভাত কেন গরম হল না, তাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে আনবে। আকাশে মেঘ নেই কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে আনছে। মমতা মাথা উঁচু করে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে এসেছে।’ এরপরই তাঁর সংযোজন, ‘আমাকে জেলে ভরবে? ভরুক। আমায় আটকে রাখলেও দেখুক কী হয়! ইউটিউব খুললেই দেখছি আমার নামে গালি দিচ্ছে। আমি তাদের উৎখাত করেই কাল তালি দেব।’

আজ মহা সমাবেশের মঞ্চ থেকে এসএসসি-র প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যারা খালি নেই নেই বলছে, অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে শিক্ষা নিয়ে। কোর্টে বিচারাধীন মামলা নিয়ে আমি কোনও কথা বলব না। আমাদের আমলে কত ছেলেমেয়েরা শিক্ষকের চাকির পেয়েছে আর সিপিআইএম-এর আমলে কী হয়েছে? পয়সা নিয়েছো আর চাকরি দিয়েছো। ওই গদ্দার অধিকারীরাই আমায় বলত। ওরাই সিস্টেমটা জানে। পার্টির নামে বদনাম করা হচ্ছে। এখনও বিচার হয়নি। মিডিয়া ট্রায়াল চলছে। একটু সময় দিতে হবে। স্কুল এবং কলেজ নিয়ে মাত্র ১০ বছরে আমরা এক লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৩ চাকরি দিয়েছি। আকাশবাবু, প্রকাশবাবু, বিকাশবাবুদের কাছে অভিযোগ গিয়েছে মাত্র ২০০-২৫০টা। অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতি থাকাকালীন একটি রায় দিয়েছিলেন। কাজ করতে গেলে কোথাও ভুল হলে আমরা সেটাকে ঠিক করে নিতে পারি যদি সুযোগ দেওয়া হয়।’

অন্যদিকে, রাজ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের সাফ জবাবে মমতা বলেন, ‘বাংলায় দেড়কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই সরকারি চাকরি ছাড়াও বাংলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি হয়েছে। বিনিয়োগ হয়েছে বিপুল টাকা। সারা ভারতে কর্মসংস্থান যখন ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে, বাংলায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এরপরও ওদের লজ্জা হয় না। লজ্জা থাকা উচিত বিজেপির। কর্মসংস্থান লক্ষ্য বলেই দেউচা পঁচামি, তাজপুর পোর্ট, জঙ্গলসুন্দরী হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, এই সভা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ছিল। রবিবার, ২৮ আগস্ট ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই উপলক্ষে আজ এই মহা সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গতকালই মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছিলেন, ‘ছাত্র পরিষদের সকল সদস্যকে অভিনন্দন। তৃণমূল পরিবারের জন্য তোমাদের অবিরাম অবদান অমূল্য। তোমরা আমাদের গর্ব। দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাও। কখনও হাল ছেড়ো না।’

অন্যদিকে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ টুইটারে লেখেন, ‘ছাত্র পরিষদের সদস্যদের এই মহান দিনে আমার শুভেচ্ছা জানাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তোমাদের সকলের দীর্ঘ লড়াই সবসময় প্রশংসিত হবে। ভবিষ্যৎ তোমাদের। তাকে উজ্জ্বল করো।’

প্রসঙ্গত, ২১ জুলাইয়ের পর সবথেকে বড় এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতির জন্য ২ বছর পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রকাশ্য সমাবেশ। এবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলেছে। দলের দুই তাবড় নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল পৃথক দুর্নীতি কাণ্ডে জেলে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নিয়ে আজ কী বার্তা দেন মমতা-অভিষেক, সেদিকেই নজর ছিল সবার। ইতিমধ্যেই সেই বার্তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রতি মহলে।