শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘হিমশৈলের চূড়া সবেমাত্র দৃশ্যমান হয়েছে’! পার্থর গ্রেফতারের পরই ফেসবুক পোস্ট শুভেন্দুর

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২২, ০১:১৬ পিএম | আপডেট: জুলাই ২৩, ২০২২, ০৭:১৬ পিএম

‘হিমশৈলের চূড়া সবেমাত্র দৃশ্যমান হয়েছে’! পার্থর গ্রেফতারের পরই ফেসবুক পোস্ট শুভেন্দুর
‘হিমশৈলের চূড়া সবেমাত্র দৃশ্যমান হয়েছে’! পার্থর গ্রেফতারের পরই ফেসবুক পোস্ট শুভেন্দুর

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টা জেরার পর আজ সকাল ১০ টা নাগাদ গ্রেফতার করে ইডি। ইডি-র তরফে অভিযোগ টাকার উৎস নিয়ে বারবার বয়ান বদলেছেন মন্ত্রী। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও রয়েছে। এরপরই শিল্পমন্ত্রীর গ্রেফতারির সম্ভবনা জোরালো হয়। জানা গিয়েছে, আজই তাঁকে আদালতে তোলা হবে। 

আর এই ঘটনায় তীব্র আক্রমণ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে তিনি চাকরি প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি আক্রমণ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। 

এদিন ফেসবুক পোস্টে শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, ‘একটি প্রজন্মকে প্রতারিত হতে হয়েছে। যোগ্য মেধাবী চাকরি প্রার্থীরা ক্লাসরুমের জায়গায়, পথে বসে প্রতিবাদ আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের চোখের জল বৃথা যাবে না। যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন বিবেচনা করে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট যে তদন্ত প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেন, তার প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট কে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। আইনি পদক্ষেপের ফল সবেমাত্র পাওয়া শুরু হয়েছে। হিমশৈলের চূড়া সবেমাত্র দৃশ্যমান হয়েছে।’

শুক্রবার থেকে দীর্ঘক্ষণ রাজ্যের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করেন ইডি-র আধিকারিকরা। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে আসেন ইডি-র আধিকারিকরা। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে অভিযান চালায় ইডি। এরপর পার্থর নাকতলার বাড়িতে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সকাল ১০ টা নাগাদ মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখপাধ্যায়কেও। অর্পিতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ২০ কোটির বেশি টাকা, ৫০ লক্ষ টাকার সোনার গয়না উদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে অর্পিতার আরও সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলেই ইডি সূত্রে খবর। 

যদিও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে আগেই পরিষ্কার জানিয়েছেন দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি দাবি করেছেন, ‘যার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগাযোগ নেই। এই টাকার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এই তদন্তে যাঁদের নাম জড়াচ্ছে, জবাব দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর ও তাঁদের আইনজীবীদের। কেন দলের নাম জড়িয়ে প্রচার চলছে? দলটা সব নজর রাখছে। যথাসময়ে দল তার বক্তব্য জানাবে। আমরা এখনও পর্যন্ত শুধু ইডির বক্তব্য পেয়েছি।’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ। সারা রাতই মন্ত্রীর বাড়িতে ছিলেন ইডি-র আধিকারিকরা। রাজ্য শিক্ষিক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড়। এই দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে একাধিক ব্যক্তির। সেই তালিকায় নাম রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামও। কলকাতা হাইকোর্টে চলা এই মামলায় আগেই সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাহিনী সঙ্গে নিয়ে শিল্পমন্ত্রীর বাড়িতে ঢোকেন ইডি-র আধিকারিকরা। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুরো বাড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এমনকি শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছেই মন্ত্রীর আপ্ত-সহায়ক এবং নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন নিয়ে নেন ইডি-র আধিকারিকরা।

এর মাঝেই টানা জিজ্ঞাসাবাদের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আইনজীবী বাড়িতে চিকিৎসকদেরও ডাকেন। এসএসকেএম থেকে চিকিৎসকরা এসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইসিজি-র পরামর্শও দিয়েছিলেন গতকাল। সূত্রের খবর, দুবার তাঁর বাড়িতে যান চিকিৎসকেরা। এরপরও থামেনি জিজ্ঞাসাবাদ। 

গতকালই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পাশাপাশি ১৩ টি জায়গায় ইডি তল্লাশি চালায়। এর মধ্যে অভিনেত্রী অর্পিতার ফ্ল্যাটেও চলে তল্লাশি। ইডি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসন থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী তথা মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২০ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ২০০০ এবং ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল। এছাড়াও ওই বাড়ি থেকে ২০টি মোবাইল ফোনও পাওয়া গিয়েছে বলে ইডির দাবি। যে পরিমাণ নগদ পাওয়া গিয়েছে, তা ব্যাঙ্ককর্মীদের দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে গোনা হয়। ইডি সূত্রের খবর, ওই টাকা স্কুলে বেআইনি নিয়োগে নেওয়া ঘুষের অংশ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তাঁরা।

অন্যদিকে, ইডি-র আরও দাবি যে, প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে ও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন জানিয়েছিলেন যে, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশেই সমস্ত নিয়োগ করা হয়েছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন মণীশ জৈন। প্রাথমিকভাবে নথি সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ করে তা যাচাই করা হয় বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।