শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পুলিশ যখন শিক্ষক! খোলা আকাশের নীচেই শিশুকে পড়াচ্ছেন কলকাতার এই ট্রাফিক সার্জেন্ট

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২২, ০৯:৪৫ পিএম | আপডেট: এপ্রিল ১৪, ২০২২, ০৩:৪৫ এএম

পুলিশ যখন শিক্ষক! খোলা আকাশের নীচেই শিশুকে পড়াচ্ছেন কলকাতার এই ট্রাফিক সার্জেন্ট
পুলিশ যখন শিক্ষক! খোলা আকাশের নীচেই শিশুকে পড়াচ্ছেন কলকাতার এই ট্রাফিক সার্জেন্ট

পুলিশ মানুষের বন্ধু। যে কোনও বিপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোই পুলিশের কাজ। তবে শুধু সামাজিক বা প্রশাসনিক কাজকর্মই নয়, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও যে কোনও প্রয়োজনে প্রায়ই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশ তথা রাজ্যের প্রশাসন বাহিনী। সেরকমই আরেকটি ঘটনার সাক্ষী রইল কলকাতার এক ফুটপাথ। শহরের এক ট্রাফিক সার্জেন্টের হাত ধরে তৈরি হল মানবিকতার এক দৃষ্টান্ত।

কলকাতার সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ প্রতিদিনই বালিগঞ্জ আইটিআই-এর কাছে ডিউটি করার সময় দেখতে পেতেন পাশেই খেলা করছে এক শিশু। শিশুটির মা পাশেই রাস্তার ধারের একটি খাবারের দোকানে কাজ করেন। ফুটপাথেই জীবন কাটে মা-ছেলের। এদিকে ছেলের ভবিষ্যতে গড়ার তাগিদে একটি সরকারি স্কুলে ওই শিশুটিকে ভর্তি করেছেন মা। সে এখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। বেশ কষ্ট করেই ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন মা।

কিন্তু ছেলের যে পড়াশোনায় মোটেই মন নেই! দিন দিন তা মায়ের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছিল। তখনই কর্মরত ওই ট্রাফিক সার্জেন্টের দ্বারস্থ হন মা। কথায় কথায় একদিন তাঁর কাছে নিজের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করে ফেলেন। সব শুনেই সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রকাশ ঘোষ নামে ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট। নিজের কাজের ফাঁকেই নিয়ম করে ওই শিশুটিকে পড়াতে বসেন তিনি। কোনওদিন ট্রাফিক সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে, আবার কোনওদিন ডিউটি শেষ করে শিশুটিকে শিক্ষা দেওয়ার ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন প্রকাশবাবু।

বর্তমানে শিশুটিকে নিয়মিত পড়াচ্ছেন কলকাতা পুলিশের ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট। বাড়ির কাজ অর্থাৎ হোমওয়ার্ক দেওয়া থেকে শিশুটির বানানের ভুল শুধরে দেওয়া, উচ্চারণ, হাতের লেখা পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া, সমস্তটাই সামলান তিনি। গায়ে উর্দি এবং পায়ে গেটার্স থাকায় যেহেতু বসতে অসুবিধে হয়, তাই পড়ানোর ‍‍`টুল‍‍` হিসেবে বেছে নিয়েছেন একটি গাছের সরু ডালকে। সেই ডালের সাহায্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই শিশুটির শিক্ষার বিকাশ ঘটাচ্ছেন প্রকাশবাবু। আর ছেলের পড়াশোনায় ক্রমশ উন্নতির ফলে ‘শিক্ষক’-এর উপর যথেষ্ট আস্থাও বেড়েছে শিশুটির মায়ের। আপাতত নিজের ডিউটি ও শিশুটির পড়াশোনা, দুই কর্তব্যই সমান দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট।

এই অভিনব ক্লাসের ছবি সর্বপ্রথম ট্যুইটারে শেয়ার করেন সাংবাদিক অর্ণবাংশু নিয়োগী। এরপর কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকেও শেয়ার করা হয় এই ছবি। সেখানেই তুলে ধরা হয় সমস্ত ঘটনাটি৷ ইতিমধ্যেই এই পোস্টটিকে অজস্র লাইক এবং কমেন্টে ভরিয়ে ফেলেছেন নেটিজেনরা। ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষের মানবতা বোধ দেখে অজস্র মানুষ স্যালুটও ঠুঁকেছেন। অনেকেই আবার কমেন্টে লিখেছেন, কলকাতা পুলিশের জন্য গর্বিত। এমন কাজকে সকলেই কুর্নিশ জানিয়েছেন।