বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

‘ব্লক ভূমি রাজস্ব অফিস ঘুগুর বাসা, অফিসের কাজ দোকানে হচ্ছে’: মমতা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২২, ০৫:৩৩ পিএম | আপডেট: মে ৩০, ২০২২, ১১:৫১ পিএম

‘ব্লক ভূমি রাজস্ব অফিস ঘুগুর বাসা, অফিসের কাজ দোকানে হচ্ছে’: মমতা
‘ব্লক ভূমি রাজস্ব অফিস ঘুগুর বাসা, অফিসের কাজ দোকানে হচ্ছে’: মমতা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এই প্রথম পুরুলিয়ায় গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বৈঠকের শুরুতেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১০০ দিনের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না। ডিসেম্বর থেকে টাকা দিচ্ছে না।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে বেশ অস্বস্তিতে ফেললেন। 

সোমবার পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে, জেলায় পড়ে থাকা প্রকল্প থেকে জমির মিউটেশন, একশো দিনের কাজের টাকা-সহ একাধিক বিষয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে জমির মিউটেশন করা নিয়ে জেলা প্রশাসনকে কড়া বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্লক ভূমি রাজস্ব অফিস ঘুগুর বাসা। অফিসের কাজ দোকানে হচ্ছে। কর্মচারীরাই করাচ্ছেন। ঘুষ না দিলে সাধারণ গরিব মানুষদের কাজ হচ্ছে না।’
পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লক নিয়ে এদিন অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই কারণেই আজকের প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই এই বিষয়ে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। শুধু তাই নয়, আদিবাসীদের গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

এদিন প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকেই একের পর এক জমি সংক্রান্ত একাধিক দরখাস্ত পড়ে শোনান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো। এইসবের মধ্যে একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, তিন ভাইয়ের নামে জমির মিউটেশন করতে গিয়ে দালাল চেয়েছে ৩০ হাজার টাকা। গরিব পরিবার কৃষক বন্ধুর সুযোগ পাচ্ছে না। এমনটাই উল্লেখ করে নালিশ জানিয়েছিল পুরুলিয়ার এক পরিবার। এমনই একাধিক দরখাস্ত তুলে ধরেন এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন, ‘বলরামপুরের বিএলআরও অফিসের ঠিক উল্টো দিকে ২টো দোকান রয়েছে। একটি হল করালীকিঙ্কর মোহান্তির দোকান। তার সাইনবোর্ড ভাঙা, অন্যটি হল প্রিয়াঙ্কা ভ্যারাইটিস। বিএলআরও অফিসের সব কাজ ওই দুটি দোকানে হয়। সাধারণ মানুষ বিএলআরও অফিসে সাধারণ মানুষ গেলে বলা হচ্ছে ওই দুটি দোকানে গিয়ে বুঝে আসতে হবে।’

এখনেই থেমে থাকেননি মমতা। বলেন, ‘গরিব মানুষকে বলা হচ্ছে জমি মিউটেশনের জন্য় রেট চালু হয়েছে। জমির মাপ অনুয়ায়ী ওই দোকান থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মিউটেশনের খরচ বলা হচ্ছে। এরা হচ্ছে মিডল ম্যান। ওরা যেই হোক দ্রুত তদন্ত করে আমি এর একটা রিপোর্ট চাই। একসময় এখানে তপসিলি জাতি উপজাতিদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তারা আগে ভাবতেই পারতো না বিএলআরও অফিসে যাবে। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে এখন অনেকে জমি মিউটেশন করাতে চাইছে। জমি রেকর্ড করা নেই বলে অনেক আদিবাসী পরিবার কৃষক বন্ধুর টাকা পাচ্ছে না। এনিয়ে প্রশাসনের তত্পর হওয়া উচিত। সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ জেলা এই পুরুলিয়া। দূরের জেলা বলে অনেকেই হয়তো জানাতে পারেন না। হুড়া বিএলআরও অফিসেও ঝামেলা চলছে।’ 

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এই পরিবারকে কেউ ধমকায়, চমকায় আমি তাকে প্রথমেই গ্রেফতার করে ঢুকিয়ে দেব। সে যেই হোক। এই কেসগুলি তুলে আনার উদ্দেশ্য হল সমাধানটা কী হবে?’

অন্যদিকে, আজ সভা শুরুর পরই আদিবাসীদের গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ সময়ই আদিবাসীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। জঙ্গলমহলে একদিন লোকে রাস্তায় বের হতে পারত না। কিন্তু, এখন সেটা অনেক সুন্দর করে দেওয়া হয়েছে। আদীবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, তারা ঠিক করে পড়াশোনা করতে পারে না। এমনকী, জমি মিউটেশন করতে গেলে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এনিয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়গুলি দেখে নিতে হবে। আদাবাসীদের গুরুত্ব দিতে হবে। আদিবাসীদের জায়গা কেউ নিতে পারবে না। এটা যদি কেউ নেয় তাহলে BLRO-নামে এফআইআর হবে।’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বছর ঘুরলেই রয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেকথা বিবেচনা করেই সব স্তরকেই দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার কথা বলেন তিনি। এর পাশাপাশি এই বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার জন্যও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘পলিটিকাল লোকেদের বিরুদ্ধে বদনামটা বেশি রটে। কিন্তু যাঁরা সরকারের কাজটা করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন তাঁদের তো ভালো ফেস নিয়ে কাজটা করতে হবে। তবেই তো সুনাম থাকবে। দুর্নামের সঙ্গে কাজ করাটা আমাদের কারওই প্রত্যাশিত নয়। কেউ ভুলভ্রান্তি করে থাকলে বলরামপুরের যারা আছেন তাঁরা শুধরে নেবেন। আর বদনাম করার জন্য কেউ কিছু করে থাকলে আপনারা তার বিরুদ্ধে এফআইআর করুন।