বাংলা ভাগ নয়! পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে দিলীপ ঘোষ সায় দিলেও, বিরোধিতায় লকেট
বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য নিয়ে বিজেপির অন্দরেই ভিন্ন মত। জন বার্লার পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিকে শনিবারই সমর্থন জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে, এবার এই ইস্যুতে উল্টো পথে হাঁটলেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং রাহুল সিনহারা। বিজেপির এই দুই সদস্য়ই উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবির বিরোধিতা করেন।
প্রথমদিকে পৃথক উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের দাবিতে সরাসরি সম্মতি না জানালেও, শনিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজের মত পরিবর্তন করেন এবং আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লার পাশে বসে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করেন। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন যে, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উত্তরবঙ্গের কোনও উন্নতি হয়নি। চিকিৎসা, শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্যের জন্য অন্যত্র যেতে হয় উত্তরবঙ্গবাসীকে। কেন হাসপাতাল, ভাল স্কুল নেই সেখানে? জঙ্গলমহলের অবস্থাও এক। শালপাতা, কেন্দুপাতা নিয়ে মা-বোনেরা সেখানে জীবিকা নির্বাহ করেন। কেন তাঁদের চাকরির জন্য রাঁচি, ওড়িশা, গুজরাটে যেতে হচ্ছে? দেশের স্বাধীনতা, উন্নয়নের লাভ পাওয়ার অধিকার নেই তাঁদের?’ আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গ আলাদা হতে চায়, তার দায়িত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি গোর্খাল্যান্ডের দাবি জিইয়ে রেখে সমঝোতা করে সরকার চালিয়েছেন।’
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। কারণ এর আগে জন বার্লা যখন প্রথম পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি জানিয়েছিলেন, তখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি যেমন জোর গলায় সেই দাবির বিরোধিতা করেননি, ঠিক তেমনই সমর্থনও করেননি। তবে, শনিবারের তাঁর এই মন্তব্যে ফের বিতর্কের সৃষ্টি হল। তবে, এবার তিনি এই ইস্যুতে দলীয় নেতৃত্বকে পাশে পেলেন না।
এদিন রাখি বন্ধন উৎসব উপলক্ষে হুগলির চুঁচুড়ায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ বিজেপির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এদিন এই অনুষ্ঠান থেকেই তিনি দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলা কখনও ভাগ হবে না।’ তিনি এই প্রসঙ্গে আরও জানিয়েছেন যে, ‘বাংলা আমাদের গর্বের জায়গা। বাঙালির ভাবনা অন্য ধরনের। তাঁরা অন্যভাবে ভাবেন। দিলীপ ঘোষ কী বলেছেন জানি না। তবে পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, বাংলা এক। বাংলা থাকবে বাংলাতেই।’
একই মত প্রকাশ করেছেন রাহুল সিনহাও। রাহুল সিনহা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘বাংলা ভাগ নিয়ে পার্টির কোনও নীতি নেই। আমরা বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে।’ তিনি আরও বলেন যে, ‘পশ্চিমবঙ্গে রাখির রাজনৈতিক এবং ভৌগলিক গুরুত্ব আছে। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নতুন করে রাখি উৎসব প্রবর্তন করেছিলেন। নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যে কারণে রাখি উদযাপন করেছিলেন, তার গুরুত্ব আজও রয়েছে। কারণ, আজও একদল মানুষ বঙ্গভঙ্গ করতে চায়।’
অন্যদিকে, পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবির পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। এই প্রসঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘সারা ভারতের ক্ষতি হচ্ছে রাজনৈতিক লাভ করবার জন্য। রাজনৈতিক স্বার্থে ভারত ভাগ হয়েছিল। তাই চাই না ভারতবর্ষ আবার ভাগ হোক। আমরা সব ভাইবোন ভারতে একসঙ্গে থাকতে চাই।’