‘ভাল কাজ করলে পুরস্কার, না হলে ভেবে দেখব’ পুরসভার কাজে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, সে অর্থে করোনা উত্তর পর্বে উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় এটা মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক।
আজ দুপুরে মধ্যমগ্রাম পৌরসভার নজরুল শতবার্ষিকী মঞ্চে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিধায়ক, সাংসদ, জেলাশাসক-সহ অন্যান্যারা। প্রত্যেক বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। শোনেন তাঁদের অভাব, অভিযোগ। উপস্থিত বিধায়ক, সাংসদদের মধ্যে কেউ জানিয়েছেন তাঁদের এলাকার নালা সংস্কারের কথা, কেউ আবার জলের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বোর্ডের সদস্যদের দাঁড় করিয়ে কাজের হিসেব নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই এই মুহূর্তে অন্যখাতে অর্থ ব্যয় সমস্যার। এদিন মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে বিধায়কদের কড়া ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রীর। শুধুমাত্র টাকা না চেয়ে প্রত্যেককে যথাযথভাবে দায়িত্ব সহকারে কাজ করার নির্দেশ দিলেন তিনি। তবে পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। এদিকে, আজ তিনি অভিযোগ করলেন, টাকা দেওয়া সত্ত্বেও পিডব্লুউডি কোনও কাজ করে না। তাঁদের তীব্র ভর্ৎসনাও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এখানেই শেষ নয়, বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি, ‘কাজ করলে পুরস্কার পাবেন। কাজ না করলে ভেবে দেখতে হবে।’ এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারাকপুর, কামারহাটি, দমদম, বিধাননগর-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন পুর প্রশাসক বোর্ডের প্রধানদের নাম ধরে ধরে তাঁদের এলাকার কাজের খতিয়ান নেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যপাধায় অভিযোগ করেন, ‘পুরসভা নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে। আপনারা এলাকা ঘুরে দেখছেন না। এলাকার কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফোন খোলা রাখতে হবে। অনেকেই ফোন ধরেন না। যা যা চাই সব করে দেওয়া হয়েছে। এখন মানুষকে দিন।’
টীটাগড় পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যানকে দাঁড় করিয়ে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেক অভিযোগ রয়েছে। আগে রাস্তাঘাট, জল ও লাইট করুন।’ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে নিজের এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেন বারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী।
অন্যদিকে, বৈঠক চলাকালীন অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর দাবি শোনার পর, মেজাজও হারান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বিধায়ক নালা সংস্কাররের আবেদন জানালে, তাঁকে ভর্ৎসনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা প্রশাসনিক সভা। নিজেরা কাজ করছেন দেখানোর জন্য মিটিংয়ে যা খুশি দাবি করলেই তা দেওয়া সম্ভব নয়। নিজেরা আগে কাজ করুন, মানুষের পাশে দাঁড়ান। তারপর দাবি জানাবেন। শুধু টাকা চাইলেই হবে না। এবার আগে আপনারা কাজ করে দেখান।’ এদিনের বৈঠকে তিনি প্রত্যেক বিধায়ককে নির্দেশ দেন নিয়মিত এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার। পাশাপাশি চাকলা, কচুয়া ধামের কাজ এখনও শেষ না হওয়ার জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে অবিলম্বে তাঁর এলাকার যে সমস্ত মন্দিরের কাজ বাকি সেগুলি পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। এছাড়াও এলাকার উন্নয়নের কাজ দ্রুত গতিতে কাজ করার জন্য ডিএমদের অধীনে ১০ জনকে নিয়োগের নির্দেশও দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই কলকাতা ও হাওড়া কর্পোরেশনে পুরভোটের দিন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিন উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে, ধাপে ধাপে সব পুরসভার নির্বাচন হবে। আজকের প্রশাসনিক এই বৈঠকে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু নিয়েও পুরসভাগুলোকে সতর্ক হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতীতে বহু পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের প্রধানের সঙ্গেই বিধায়ক কিংবা সাংসদের বিরোধ প্রকাশ্য়ে উঠে এসেছে। তাই আসন্ন পুরভোটের আগে গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বোর্ডের প্রধানদের সতর্ক করে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ‘বিধায়ক, সাংসদদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখুন।’