মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

বিজেপি যোগ! নন্দীগ্রাম মামলা কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে অন্যত্র সরানোর আর্জি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীর

০৪:৫৩ পিএম, জুন ১৮, ২০২১

বিজেপি যোগ! নন্দীগ্রাম মামলা কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে অন্যত্র সরানোর আর্জি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীর

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ইতিমধ্যেই পিছিয়ে গেছে একুশের বিধানসভা ভোটের নন্দীগ্রামের ফলাফল সংক্রান্ত মামলার শুনানি। ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ চলতি মাসের ২৪ তারিখ।

এদিকে বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে মামলা অন্যত্র সরানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের ফলাফলে কারচুপি করে জিতেছেন শুভেন্দু অধিকারী, এমনটাই অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস, নন্দীগ্রামের ফলাফল প্রকাশের পর। এই একই অভিযোগে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, আজই কলকাতা হাইকোর্টে কৌশিক চন্দের সিঙ্গল বেঞ্চে এই মামলা ওঠে।

তবে, বিভিন্ন পক্ষকে এই মামলায় যুক্ত করার জন্যই আজকের মতো শুনানি মুলতবি করা হয় আদালতের পক্ষ থেকে। এদিন এই মামলা সম্পর্কে বিচারপতি কৌশিক চন্দ বলেন, ‘ইলেকশন পিটিশনের শুনানির সময় থাকতে হয় মামলাকারীকে’। আর এক্ষেত্রে মামলাকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শুনানি চলাকালীন তাঁকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হত।

তবে, এদিন আদালতে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত না থাকায়, বিচারপতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চান। যার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী গোপাল মুখোপাধ্যায় জানান যে, যা নিয়ম রয়েছে, তা পালন করা হবে। তবে, ইতিমধ্যেই এই মামলায় বিচারপতি কৌশিক চন্দের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কৌশিক চন্দকে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে বলে ছবিও প্রকাশ করেন দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে তাঁর আইনজীবী প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদনে জানিয়েছেন, ‘২০২১ সালের এপ্রিলে কৌশিক চন্দকে স্থায়ী বিচারপতি করার জন্য চিঠি দেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। তখন আপত্তি জানান মুখ্যমন্ত্রী।উশিক,পাশাপাশি ওই ওই বিচারপতি বিজেপির সক্রিয় সদস্য অতএব তিনি পক্ষপাতদুষ্ট। পরিশেষে অনুরোধ জানাচ্ছি, পক্ষপাত এড়ানোর জন্য মামলাটি অন্য বেঞ্চে পাঠানো হোক।’

অন্যদিকে, নন্দীগ্রামের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে কেন? এই প্রশ্নে হাইকোর্টে এদিন বিক্ষোভ দেখান আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর মামলা যে বিচারপতির এজলাসে দেওয়া হয়েছে, সেই কৌশিক চন্দ আগে বিজেপির ‘সক্রিয় সদস্য’ ছিলেন। তাই তাঁর এজলাসে নন্দীগ্রাম মামলা উঠলে, বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নন্দীগ্রাম মামলা বিচারপতি চন্দের এজলাসে পাঠানোর প্রতিবাদে মুখে কালো মাস্ক এবং হাতে পোস্টার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আইনজীবীরা। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘বিচারব্যবস্থার সঙ্গে রাজনীতি করবেন না।’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা ভোতে হাই-ভোল্টেজ কেন্দ্র ছিল নন্দীগ্রাম। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল থেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের আগেও এই কেন্দ্রে ছিল উত্তেজনা আর ভোটের পরেও সরগরম ছিল। জল শেষ পর্যন্ত গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। নন্দীগ্রামের ফলাফল প্রকাশের পরই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, কারচুপি হয়েছে। তিনি আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সম্প্রতি নন্দীগ্রামের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে, হাইকোর্টে মামলা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করেছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী৷

১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮০, ৮০এ, ৮১, ১০০ এবং ১২৩ ধারায় মামলা করা হয়েছে৷ আদালতের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারী ঘুষ দিয়েছেন। প্রভাব খাটিয়েছেন। জনগণের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছেন। সরকারি আধিকারিকদের সাহায্য নিয়েছেন এবং বুথ দখল করেছেন।

উল্লেখ্য, রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকা নিয়েও মামলায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ২ মে গণনার সময় একাধিক গরমিল ও কারচুপি হয়। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের সহকর্মীরা পুনর্গণনার দাবি জানান। কিন্তু, কোনও কারণ ছাড়াই সেই আর্জি খারিজ করে দেন রিটার্নিং অফিসার। ২১ সি ফর্মে সই করে শুভেন্দু অধিকারীকে জয়ী ঘোষণা করে দেন। এছাড়াও আবেদনপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, কত ভোট মিলেছে এবং গণনা সংক্রান্ত যে ১৭ সি ফর্ম তাতেও বিস্তর কারচুপি ও গরমিল হয়েছে। সংবিধান এবং আইন সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে ভোট হয়েছে নন্দীগ্রামে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১০০ ধারা অনুযায়ী, নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ভোটকে বাতিল ঘোষণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

ভোটের ফল নিয়ে অভিযোগ থাকলে ৪৫ দিনের মধ্যে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করতে হয়৷ রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশ হয় ২ মে৷ সেই মতো ৪৫ দিনের মধ্যেই হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করা হয়েছে৷ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী সূত্রে দাবি, এ বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না৷ ইলেকশন পিটিশন সংক্রান্ত নথি তাঁদের দেওয়া হয়নি।