শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

খাদ্য সঙ্কট চরমে, ক্রমশ বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা! দেশে অপুষ্টির শিকার ৩৩ লাখের বেশি শিশু

১০:৫২ পিএম, নভেম্বর ৭, ২০২১

খাদ্য সঙ্কট চরমে, ক্রমশ বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা! দেশে অপুষ্টির শিকার ৩৩ লাখের বেশি শিশু

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ক্রমশ বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা। দেশে খাদ্য সঙ্কট ক্রমশ চরমে উঠছে। দেশে এই মুহূর্তে ৩৩ লাখের বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। আর এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশুই গুরুতর অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের করা এক আরটিআই-এ উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

দেশের মধ্যে যেসব রাজ্যে এই সব অপুষ্টিজনিত শিশু সংখ্যায় বেশি রয়েছে, সেইসব রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র, বিহার এবং গুজরাট। পিটিআইয়ের করা এক আরটিআই-এ কেন্দ্র জানিয়েছে দেশের ১৭,৭৬,৯০২ শিশু গুরুতর অপুষ্টির শিকার। ১৫,৪৬,৪২০ জন শিশু ভুগছে কমবেশি অপুষ্টিতে। এই হিসেব এবছর অক্টোবর মাসের। এই পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক। করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম শ্রেণির মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিজনিত সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক।

সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের জমা করা এক আরটিআই-এর জবাবে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, দেশের ৩৪ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৩৩ লাখ ২৩ হাজার শিশু অপুষ্টির শিকার। আর এই পরিসংখ্যান পোষণ ট্র্যাকার অ্যাপে নথিভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরেই এই অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আর গত নভেম্বরের পরিসংখ্যানের সঙ্গে চলতি বছরের অক্টোবরের পরিসংখ্যান তুলনা করে দেখলে তা আরও ভয়ঙ্কর। দেখা গিয়েছে, নভেম্বরের তুলনায় ৯১ শতাংশ বেড়েছে গুরুতর অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা। গত বছরের নভেম্বরে যে সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২৭ হাজার এবছরে তা বেড়ে হয়েছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার।

আরটিআই-এর জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, ১ লাখ ৫৭ হাজার শিশু মাঝারি ধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যার শিকার এবং ৪ লাখ ৫৮ হাজার শিশু গুরুতর অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। সবমিলিয়ে মহারাষ্ট্রে অপুষ্টির শিকার ৬.১৬ লাখ শিশু। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার। সেখানে মোট ৪ লাখ ৭৫ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। তার মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা গুরুতর। শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যায় গুজরাট রয়েছে তৃতীয় স্থানে। সেখানে এখনও পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। তার মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার শিশুর অবস্থা গুরুতর। পোষণ ট্র্যাকারের মাধ্যমে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে, তাতে সরাসরি অঙ্গনওয়াড়িগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখানে শিশুদের বয়সের কোনও নির্দিষ্ট গ্রুপের উল্লেখ নেই।

এই বিষয়ে চাইল্ড রাইটস, ক্রাই-এর মতো সংস্থাগুলি তাদের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, দেশের আর্থ সামাজিক সব ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে করোনা সংক্রমণ। ক্রাইয়ের সিইও পুজা মারওয়া এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকার কারণে আইসিডিএস ও মিড ডে মিলের মতো পরিষেবা বন্ধ। দারিদ্রের মধ্যে থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি কঠিন প্রভাব ফেলেছে। মহারাষ্ট্র, বিহার ও গুজারাটের নীচে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (২.৬৭ লাখ), কর্ণাটকে (২.৪৯ লাখ)। এর পরেই রয়েছে অসম, তেলঙ্গানার মতো রাজ্য।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে বাংলাদেশের নীচে চলে গিয়েছে ভারত। ২০২১ সালে ১১৬ দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এখন ১০১ নম্বরে। ২০২০ সালে ভারতের স্থান ছিল ৯৪। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সালে কেন্দ্র চালু করেছে পোষণ অভিযান। তার পরেও এই পরিসংখ্যান ভাবাচ্ছে কেন্দ্র সরকারকে।