বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

নারদা মামলায় মমতার আবেদনে শীর্ষ আদালতের সাড়া! কলকাতা হাইকোর্টকে হলফনামা জমা নেওয়ার নির্দেশ

০৪:০৬ পিএম, জুন ২৫, ২০২১

নারদা মামলায় মমতার আবেদনে শীর্ষ আদালতের সাড়া! কলকাতা হাইকোর্টকে হলফনামা জমা নেওয়ার নির্দেশ

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ নারদা মামলাকে কেন্দ্র করে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলায় মুখ্যমন্ত্রীকে পক্ষ করা হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আইনজীবী হলফনামা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, তা গৃহীত হয়নি। গত ১০ জুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হলফনামা জমা নিতে অস্বীকার করে কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সেই আবেদনে এদিন সাড়া দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।

এদিন নারদা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করল দেশের শীর্ষ আদালত। এই মামলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের দায়ের করা হলফনামা কলকাতা হাইকোর্টকে গ্রহণ করতে হবে। এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ২৯ জুন, নারদা মামলার পরবর্তী শুনানির দিনই তা গ্রহণ করতে হবে। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে নতুন করে হলফনামা জমা দিতে হবে এবং তা রেকর্ডও করতে হবে। এমটাই জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা। অতএব এদিনের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে, নারদা মামলায় আপাতত স্বস্তিতে রাজ্য সরকার।

এদিন শীর্ষ আদালতের তরফে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ২৮ জুনের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে নতুন করে আবেদন করতে হবে। তাঁর হলফনামা পেশ করতে হবে। সেই হলফনামার অ্যাডভান্স কপি ২৭ জুনের মধ্যে সিবিআইকে পাঠাতে হবে। ২৯ জুন হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্জে হবে নারদ মামলার শুনানি। সেদিন মূল মামলা শোনার আগে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি আগে শোনার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

উল্লেখ্য, গত মাসের ১৭ তারিখ নারদা মামলায় নেতা-মন্ত্রী-সহ চার প্রভাবশালীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ওই দিন সিবিআইয়ের অফিস নিজাম প্যালেসের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মী এবং সমর্থকরা। মুখ্যমন্ত্রীও যান নিজাম প্যালেসে। সেখানে তিনি ৬ ঘণ্টা ছিলেন। এই ঘটনাকে খুব একটা ভালভাবে নেয়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। অন্যদিকে, শুনানি চলাকালীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। সিবিআই এর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, নেতাদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে, তাদের উপর চাপ তৈরি করছে রাজ্যের শাসকদল। এরপর এই মামলায় মলয় ঘটক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পক্ষ করা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট এই মামলায় মুখ্যমন্ত্রীর হলফনামা নিতে অস্বীকার করে।

এদিকে, ৯ জুন কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর হলফনামায় বলা হয়েছিল যে, ‘ওই দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজাম প্যালেসে যাননি। ধৃতদের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছাত্রাবস্থা থেকে তাঁর পরিচয়।’ গত ৯ জুন সিবিআইয়ের আর্জির শুনানির সময় কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বলেছিল যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মলয় ঘটকের হলফনামা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, ওই হলফনামা গ্রহণ করেননি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। উল্লেখ্য, এই মামলায় আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে হাইকোর্টে সওয়াল করেছিলেন প্রবীণ আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী ও বিকাশ সিংহ। আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতে জানান যে, ‘সিবিআই গুরুতর অভিযোগ করছে। তাই আমাদের এই বিষয়ে বলতে হবে।’ এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, ‘আপনি আপনার মতো করে আদালতকে চালিত করতে পারেন না। শুনানি এত দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আবার পিছনে দিকে হাঁটব?’

আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে আইনজীবীরা বলেন যে, গত ১৭ মে-র ঘটনায় উক্ত দুই ব্যক্তির হলফনামা হাইকোর্টের রেকর্ড করা প্রয়োজন। আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদীর বক্তব্য ছিল, আইনমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছিলেন এবং শুনানির সময় তিনি আদলতে ছিলেন না। এমনকি সিবিআইয়ের আধিকারিকরাও সেখানে ছিলেন না। কারণ, কেন্দ্রীয় এই সংস্থার আইনজীবীরাও অনলাইনে কাজ করেছিলেন। অন্যদিকে, আইনজীবী বিকাশ সিংহ বলেন যে, নিয়ম অনুসারে, হলফনামা দায়েরের অধিকার রয়েছে। আর এক্ষেত্রে সিবিআই তিনটি হলফনামা দায়ের করেছে শুধু নয়, এক্ষেত্রে তারা আদালতের অনুমতি গ্রহণ করেনি।

আসলে নিজাম প্যালেসে যাওয়া নিয়ে, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু হাইকোর্ট তাঁর হলফনামা গ্রহণ না করায়, তাঁকে শেষপর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা নিতে অস্বীকার করায়, গত ২১ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর বেঞ্চে শুনানির কথা থাকলেও, শুরুতেই নিজেকে সরিয়ে নেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। তৈরি হয় নতুন বেঞ্চ। বিচারপতি বিনীত শরণ ও বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরীর নতুন বেঞ্চ তৈরি করে শুনানি হয়। এরপর শুক্রবার নারদ মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা জানান, কলকাতা হাইকোর্টকে এই হলফনামা গ্রহণ করতে হবে।