বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

কথা থাকলেও, আজ হাইকোর্টে হচ্ছে না নারদা মামলার শুনানি! আপাতত জেল হেফাজতই ঠিকানা হেভিওয়েটদের

০১:০০ পিএম, মে ২০, ২০২১

কথা থাকলেও, আজ হাইকোর্টে হচ্ছে না নারদা মামলার শুনানি! আপাতত জেল হেফাজতই ঠিকানা হেভিওয়েটদের

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ হচ্ছে না নারদাকাণ্ডে ধৃত ফিরহাদ, মদন, সুব্রত, শোভনদের জামিনের শুনানি। হাইকোর্টের ওয়েব-সাইটে দেওয়া নোটিস অনুযায়ী, আজ হবে না এই মামলার শুনানি। আগামিকাল নারদ মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আদালত সূত্রে খবর, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ না বসার জন্যই আজ শুনানি বন্ধ থাকছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টোর সময় শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে, শুনানি না হওয়ার কারণে আপাতত চার হেভিওয়েটকে জেল হেফাজতেই থাকতে হবে।

বুধবার নারদা মামলায় দুটি আবেদনের শুনানি ছিল। এর মধ্যে একটি ধৃত ৪ নেতা-মন্ত্রীদের জামিনের আর্জির এবং অপরটি সিবিআই-এর পক্ষ থেকে এই মামলা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আবেদনের। বুধবার নারদা মামলায় ধৃত চার প্রভাবশালীর জামিনের আর্জির শুনানি থাকলেও, তা হয়নি। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা শুনানির পরেও, বুধবার জামিন পাননি নারদাকাণ্ডে ধৃত ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়। ফলে বুধবারও তাঁদের জেল ফেহাজতেই থাকতে হয়। যদিও অসুস্থতার কারণে মদন, শোভন, সুব্রত এসএসকেএম-এ থাকলেও, ফিহারদ প্রেসিডেন্সি জেলেই ছিলেন।

বুধবার সওয়াল-জবাব হয় মূলত সিবিআই-এর আবেদন নিয়েই। অর্থাৎ নারদা মামলা অন্য রাজ্যে সরানো হবে কিনা তা নিয়েই। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে এসব সওয়াল-জবাবের পর বিচারপতিরা জানান, আজকের মতো শুনানি শেষ। আবার বৃহস্পতিবার শুনানি হবে। ফলে ৪ নেতার জামিন সংক্রান্ত সওয়াল-জবাবের সুযোগ ঘটেনি সিবিআই-এর আবেদনের শুনানি চলায়। ফলে স্থগিতাদেশ জারি থাকে বুধবারও।

তাই বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আজ দুপুর ২ টোর সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এই চার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের জামিনের শুনানি এবং তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আপাতত তা হচ্ছে না বলেই খবর। এদিকে ক্রমশ চড়ছে রাজ্যজুড়ে উত্তেজনার পারদ।

এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে শাসকদলের নেতারা একটাই বার্তা দিচ্ছেন, লড়াইটা আইনি, তাই কোনওভাবেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। গতকালকের শুনানিতে অভিযুক্তদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এই নারদা মামলাকে কার্যত নজিরবিহীন বলেন। বলেন, ৭৫ বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। তাঁর যুক্তি ছিল গত ৬ বছরে অভিযুক্তরা কোনও রকম অসহযোগিতা করেননি তদন্তে। তাহলে এই করোনাকালে কেন তাঁদের জামিনের আদেশ স্থগিত করা হল? ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপচতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কেন জেলে পাঠাতে হল নেতাদের? এর উত্তরে সিবিআই-এর পক্ষ থেকে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, বিক্ষোভের ফলে সিবিআই-এর উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর সেই জন্যই নিম্ন আদালতে জামিন মিললেও, পরে হাইকোর্টে জামিন স্থগিত হয়ে যায়।

সোমবার রাজ্যের এই নেতাদের গ্রেফতারিতে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। এই জনরোষ স্বাভাবিক এবং প্রতিবাদের স্বর্তস্ফূর্ত প্রকাশ- এমনটাই মত অভিযুক্তদের আইনজীবীর। সোমবার নিজাম প্যালেসের সামনে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিচারপতিদের সামনে সওয়াল করেন অভিষেক মনু সিংভি। এর পালটা আদালত তাঁর কাছে জানতে চায়, পাথর ছোঁড়াই কি প্রতিবাদ জানানো? সিবিআই আইনজীবী তুষার মেহতার যুক্তি ছিল, মুখ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীরা সিবিআই দফতরে বসে চাপ দিয়েছেন, তাই জামিন মঞ্জুর করা হয়েছিল সিবিআই আদালতের তরফে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কী করে মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসেন?

অভিষেক মনু সিংভি স্পষ্ট বলেন, মমতা বন্দ্যপাধ্যায় কোনও বিক্ষোভে অংশ নেননি। তিনি পাশে থাকার বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মতে, রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করলে বিশৃঙ্খলা হবেই। তিনি সলমন খান, সঞ্জয় দত্তদের গ্রেফতারির উদাহরণ তুলে আনেন। পাশাপাশি এই অভিযুক্ত নেতারা যে জনতাকে বারংবার শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন, সে কথাও মনে করান তিনি।

মনু সিংভি এও প্রশ্ন তোলেন যে, অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, জামিন খারিজের মতো ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে? অন্য একটি প্রশ্নও ওঠে, চার্জশিট তৈরি যখন, তখন অভিযুক্তদের জেলে রাখারই প্রয়োজনটা কেন পড়ছে? অভিযুক্তরা যেখানে সকলেই কমবেশি অসুস্থ, সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। মদন মিত্র অতীতে আক্রান্তও হয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে তুষার মেহেতার বক্তব্য ধৃতেরা প্রভাবশালী। তাঁরা বাইরে থাকলে প্রভাব খাটাতে পারেন। এই পরস্পর যুক্তিতেই শুনানির সময় শেষ হয়।

এদিকে আজও হচ্ছে না শুনানি। এই পরিস্থিতিতে এক নতুন সম্ভবনার কথা সামনে এসেছে। সূত্রের খবর, নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গড়ার আবেদন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চালানো হচ্ছে হেভিভিওয়েট নেতাদের তরফে। এক্ষেত্রে ৪ হেভিওয়েট নেতারা এই মর্মে আবেদন করতে পারেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে। এমন একটা সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে।