শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

বয়স সেঞ্চুরি পার, ৭০ বছর ধরে শিশুদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন ওড়িশার এই শিক্ষক! পেয়েছেন পদ্মশ্রীও

০৬:০৩ পিএম, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১

বয়স সেঞ্চুরি পার, ৭০ বছর ধরে শিশুদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন ওড়িশার এই শিক্ষক! পেয়েছেন পদ্মশ্রীও

বয়স ১০০ পেরিয়েছে কবেই! পুঁথিগত বিদ্যাও মাত্র সপ্তম শ্রেণী অবধি৷ তবু সেই জ্ঞানটুকুই সম্বল করে প্রায় ৭০ বছর ধরে গ্রামের শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দান করছেন ওড়িশার 'নন্দ' মাস্টার। প্রকৃত নাম নন্দ কিশোর প্রুস্তি। দীর্ঘ সাত দশক ধরে একক চেষ্টায় গ্রামের তিন প্রজন্মকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। শিক্ষার বিকাশে তাঁর এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ চলতি বছরে তাঁকে পদ্মশ্রীতেও ভূষিত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

ওড়িশার ঐতিহ্যশালী ‘চটশালি’ বা টোল শিক্ষাদান প্রথার সম্ভবত একমাত্র জীবিত প্রতিনিধি নন্দ মাস্টার। আর্থিক দুরবস্তার কারণে নিজের শিক্ষাদান সম্পূর্ণ করতে পারেননি ওড়িশার যাজপুর জেলার কান্টিরা গ্রামের বাসিন্দা এই বৃদ্ধ। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মানুষের নিরক্ষরতা খুবই ভাবাত তাঁকে। নিজের সপ্তম শ্রেণীর জ্ঞান নিয়েই গ্রামের শিশুদের লেখাপড়ার সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে উদ্যোগী হন নন্দ প্রুস্তি। এরপরই স্বাধীনতার পরবর্তীতে নিজের বাড়িতেই বানিয়ে ফেললেন আস্ত একটা স্কুল। অবশ্যই বিনামূল্যে। সেখানেই দুঃস্থ, সম্বলহীন শিশুদের পড়াশোনা শেখানোর দায়িত্ব নিলেন তিনি।

[caption id="attachment_30243" align="alignnone" width="1200"]বয়স সেঞ্চুরি পার, ৭০ বছর ধরে শিশুদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন ওড়িশার এই শিক্ষক! পেয়েছেন পদ্মশ্রীও / Image Source: Twitter বয়স সেঞ্চুরি পার, ৭০ বছর ধরে শিশুদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন ওড়িশার এই শিক্ষক! পেয়েছেন পদ্মশ্রীও / Image Source: Twitter[/caption]

এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল দীর্ঘ সত্তরটা বছর। এখনও প্রতিদিন ভোররাত থেকে দফায় দফায় কচিকাঁচারা আসে তাঁত স্কুলে। বেলা পর্যন্ত চলে পড়াশোনা। বিকেলেও আসে ছাত্রছাত্রীরা। আর সন্ধ্যার দিকে মাঝেমধ্যে আসেন গ্রামের বয়স্ক মানুষরা। কাজকর্মের ফাঁকে তাঁরাও খানিক জ্ঞান আরোহন করেই ফেরেন। নন্দ প্রুস্তির এই স্কুলই অবশেষে তাঁকে এনে দিয়েছে পদ্মশ্রীর সম্মান। যদিও শতায়ু পেরোনো এই বৃদ্ধ শিক্ষক কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবেননি এই সম্মান তিনি পাবেন। তিনি নিজের কাজটুকুই করে যেতে আগ্রহী। শিশুদের শিক্ষাদানেই তাঁর আনন্দ।

বর্তমানে কান্টিরা গ্রামের আশেপাশে বহু স্কুল ও কলেজ গড়ে উঠলেও, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় হাতেখড়ির দেওয়াতে এখনও নন্দ মাস্টারের পাঠশালাই ভরসা গ্রামের মানুষের। আর বৃদ্ধ ওই শিক্ষকও তাদের শিক্ষাদানে সমান আগ্রহী। তাঁর কথায়, "আগে দেখতাম ছেলেমেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার কোনও চর্চাই নেই। আমি তাদের গাছতলায় পড়াতে শুরু করলাম। ক্রমে ওদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হল। এখন বহু পড়ুয়াই আসে। যত দিন শরীর ভরসা দেবে, আমি শিশুদের পড়িয়ে যাব। আমি শুধু চাই ওরা বড় হয়ে ভালো মানুষ তৈরি হোক।" বয়সের সেঞ্চুরি পার করা এই বৃদ্ধ শিক্ষকের এই ঘটনা সারা দেশের কাছেই এক অন্যতম মাইলস্টোন তো বটেই!