বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

জাহাজে জামসেদজি টাটার সহযাত্রী! টাটাকে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বামীজি?

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২২, ০৩:৫০ পিএম | আপডেট: জুলাই ৪, ২০২২, ০৯:৫৩ পিএম

জাহাজে জামসেদজি টাটার সহযাত্রী! টাটাকে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বামীজি?
জাহাজে জামসেদজি টাটার সহযাত্রী! টাটাকে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বামীজি?

জাপানের টোকিও সমুদ্র উপকূলের ইয়োকোহামা থেকে আমেরিকার ভ্যাঙ্কুবারের দিকে রওনা দিয়েছে যাত্রীবাহী এক জাহাজ, ‘এমপ্রেস অফ ইন্ডিয়া’। সেই জাহাজটিতে রয়েছেন মাত্র দু‍‍`জন ভারতীয় যাত্রী। একজন বাঙালি, এবং অপর জন পার্সি। বাঙালি যুবকটি চলেছেন আমেরিকার শিকাগোতে। সেখানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব মহাধর্ম সম্মেলনে যোগ দিতে। তিনি, আমাদের সব্বার পরিচিত স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda)। পার্সি ভদ্রলোকটি বোম্বাইয়ের এক নামজাদা ব্যবসায়ী। জাপান থেকে তিনি দেশলাই রপ্তানি করেন ভারতে। আমেরিকা যাচ্ছেন ব্যবসারই প্রয়োজনে। তাঁকেও আমরা প্রায় সবাই চিনি। ভারতীয় বাণিজ্য জগতের প্রাণপুরুষ, জামসেদজি টাটা (Jamshedji Tata)।

আমেরিকা যাওয়ার পথে জাহাজের ডেকে জমে উঠল আড্ডা। এর আগে জাপানে দেশলাই কারখানা দেখতে গিয়ে স্বামীজির প্রথম দেখা জামসেদজির সঙ্গে। ইয়োকোহামাতেও ছিলেন একই হোটেলেই। এখন আবার একই সঙ্গে একপথে যাত্রা৷ বন্ধুত্ব জমতে বেশি সময় লাগার কথাই নয়! আড্ডার বিষয় হিসাবে উঠে এল নানা প্রসঙ্গ। ব্যবসা-বানিজ্য, ধর্ম, রাজনীতি থেকে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি- কী ছিল না সেই আড্ডায়!

ঠিক তখনই স্বামীজি জামসেদজি টাটাকে পরামর্শ দিলেন ভারতের মাটিতে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার। আধুনিক প্রাশ্চাত্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গড়ে তুলতে বললেন কারখানা। তাতে যেমন লাভবান হবেন টাটা, তেমনই উন্নতি ঘটবে দেশের অর্থনীতিরও। কর্মসংস্থান ঘটবে দেশের মানুষগুলিরও।

সেদিন স্বামীজির কথায় তেমন আমল দেননি টাটা। কিন্তু ঠিক বছর পাঁচেক পর সেই তিনি স্বামীজিকে চিঠি লেখেন। তাঁকে অনুরোধ করেন, তাঁর পরিকল্পিত ‍‍`টাটা রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান হওয়ার। তিনি এও বলেন স্বামীজির পরামর্শেই তিনি গড়ে তুলেছেন এই প্রতিষ্ঠান। এই কাজে স্বামীজির সমর্থন তাই চিরকাম্য। এছাড়াও স্বামীজির উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবসায়িক গবেষণার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহও বাড়বে বহুগুণ।

এদিকে বিবেকানন্দ তখন ব্যস্ত রামকৃষ্ণ মিশন গড়ে তোলার কাজে। ফলে নিজে সাক্ষাৎ করতে পারলেন না টাটার সঙ্গে। বদলে ভগিনী নিবেদিতাকে পাঠিয়ে দিলেন তাঁর কাছে।এরপর ভগিনী নিবেদিতাকে সঙ্গে নিয়েই জামসেদজি প্রকল্পটির বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে থাকেন। তবে সেই সময় তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের চাপে বাস্তবায়িত হয়নি সেই প্রকল্প। কিন্তু এক বিন্দুও দমলেন না জামসেদজি। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, বিজ্ঞান ও শিল্পের গবেষণার মাধ্যমেই দেশের উন্নতি ঘটবে। অগ্রসর হবে অর্থনীতির।

১৮৮৯ সালে তিনি দেখা করেন মহীশূরের দেওয়ান শেষাদ্র্রি আইয়ারের সঙ্গে। তাঁরই সাহায্যে এরপর মহীশূরের তৎকালীন শাসক কৃষ্ণরাজ ওয়েদেয়ার (৪র্থ)-এর থেকে বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রস্থলে প্রায় ৩৭২ একর মুক্ত জমি পান জামসেদজি। সেখানেই প্রতিষ্ঠানটির গড়ে তোলার কাজে হাত লাগালেন তিনি। কিন্তু সে কাজ বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই মৃত্যু ঘটে স্বামীজি এবং জামসেদজির। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই, আজকের তারিখেই মারা যান স্বামী বিবেকানন্দ। দু‍‍`বছর পর মারা গেলেন জামসেদজি টাটাও।

তবে তার পাঁচ বছর পরে সফল হল দুই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের মিলিত পরিকল্পনা। ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হল টাটা ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স।  ১৯১১ সালে সেটিই নাম বদলিয়ে পরিচিত হয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISC) নামে। আর আজ ভারত তথা সারা বিশ্বের অন্যতম এক গবেষণাকেন্দ্র এই প্রতিষ্ঠান। যা গড়ে তোলার পিছনে অন্যতম এক শুভ-চিন্তক হিসাবে ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দই।