বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

‍‍`সফলতার প্রধান মন্ত্র কী?‍‍` পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তরে যা জানিয়েছিলেন এপিজে আবদুল কালাম

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২২, ০৪:০১ পিএম | আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২২, ১০:৪৬ পিএম

‍‍`সফলতার প্রধান মন্ত্র কী?‍‍` পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তরে যা জানিয়েছিলেন এপিজে আবদুল কালাম
‍‍`সফলতার প্রধান মন্ত্র কী?‍‍` পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তরে যা জানিয়েছিলেন এপিজে আবদুল কালাম

তাঁকে ডাকা হতো ‘জনগণের রাষ্ট্রপতি’ বা ‘পিপলস প্রেসিডেন্ট’ নামে। ছিলেন অসামান্য এক বিজ্ঞানীও। তাঁর হাত ধরে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে অবাধ বিচরণ ছিল ভারতের৷ পরবর্তীতে তিনিই হয়ে ওঠেন ‍‍`মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া‍‍‍‍`! অথচ ছেলেবেলায় আর্থিক অনটন মেটাতে কাগজ বিলি করতে হতো তাঁকে। তখন তিনি নিজেও জানতেন না, পরবর্তীতে নিজের ব্যক্তিত্বের জাদুতে এত প্রবল জনপ্রিয়তা অর্জন করবেন! এতক্ষণে নিশ্চয়ই আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে কার কথা হচ্ছে? তিনি আর কেউ নন, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম (APJ Abdul Kalam)।

ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির (অধুনা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের) রামেশ্বরমের এক তামিল মুসলমান পরিবারে ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর, জন্মগ্রহণ করেন এপিজে আবদুল কালাম। বাবা জয়নুল-আবেদিন ছিলেন একজন নৌকামালিক। কাঠের নৌকা তৈরি করে তিনি ভাড়া দিতেন মৎসজীবীদের। তীর্থযাত্রীদের নৌকা পারাপারও করাতেন৷ মা অশিয়াম্মা ছিলেন গৃহবধূ। কালামরা ছিলেন পাঁঁচ ভাই ও পাঁচ বোন।  পরিবারের দি  কাটত আর্থিক অনটনে। তাই নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতে একসময় খবরের কাগজও বিলি করেছেন কালাম।

দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটলেও আবদুল কালামের জেদ ও ইচ্ছাশক্তি ছিল প্রবল। আর সেই জোরেই জীবনে সফল হয়েছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট কে আর নারায়ণনের পর ২০০২ সালের ২৫ জুলাই পাঁচ বছরের মেয়াদে ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন কালাম। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ‘জনগণের রাষ্ট্রপতি‍‍` হিসেবেই সারা ভারতের সব শ্রেণীর মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন এই মানুষটি। তবে নিজেকে সবার আগে তিনি একজন শিক্ষক হিসাবেই পরিচয় দিতেন। তাঁর জীবনের মন্ত্রও ছিল খুবই সহজ, লক্ষ্য স্থির করে কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে যাওয়া।

একবার ২০১২ সালে, এশিয়ানেট নিউজ এডুফেস্টে ভবিষ্যত জীবনের কেরিয়ার গড়ার আলোচনায় যোগ দেন ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। এক পড়ুয়া সে সময় তাঁকে প্রশ্ন করে,  জীবনে সফল হওয়ার জন্য মন্ত্র কী? পরবর্তী প্রজন্মকে কী উপদেশ দিতে চান তিনি? উত্তরে ৪টি প্রধান কথা মেনে চলার কথা বলেন এপিজে আবদুল কালাম। এক, জীবনে মহান লক্ষ্য স্থির করা, দুই, জ্ঞান অর্জন করতে থাকা, তিন, কঠোর পরিশ্রম করা ও চার, জীবনে কঠিন অধ্যবসাইয়ের মাধ্যমে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলা। সেই আলোচনা সভাতে তিনি আরও বলেন, এই দেশের নবীন ছেলেমেয়েরাই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদের হাতেই লুকিয়ে সফলতার চাবিকাঠি।

মানবিক দিক থেকেও একেবারে ভিন্ন ধারার মানুষ ছিলেন ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি তাঁর সমান দৃষ্টি ছিল তাঁর।একবার ইফতারের জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে আটা, ডাল,কম্বল, সোয়েটারের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তা বিতরণ করা হয় প্রায় ২৮টি অনাথ আশ্রমে শিশুদের মধ্যে। এছাড়াও একবার তানজানিয়ার হৃদরোগে আক্রান্ত বহু শিশুকে ভারতে এনে নিজের প্রচেষ্টায় হায়দ্রাবাদের কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসার পর শিশুগুলি সুস্থ হয়ে নিরাপদে তানজানিয়ায় ফিরে যায়।

শুধু মানুষই নয়, পশু-পাখিদের প্রতিও তাঁর ভালবাসার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তাদের দুঃখ-কষ্টেও কাতর হয়ে উঠত তাঁর প্রাণ। একবার এক ময়ূরের টিউমার সারিয়ে তোলাতেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এভাবেই মানুষ হোক বা যে কোনও বরাবর  সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করে গিয়েছেন আবদুল কালাম। তাঁর এই মানবতা বোধের প্রতি কৃতজ্ঞ গোটা দেশের মানুষ।

তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি, যিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা, ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। অবসরের পর দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার কাজ করতেন ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই শিলংয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে ভাষণ দিতে ওঠার সময় অস্বস্তি বোধ করেন কালাম। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর বক্তৃতা শুরু করার মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথাতেই জ্ঞান হারান তিনি। তাঁকে কাছাকাছি বেথানি হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। প্রয়াণের পর ৩০ জুলাই ‘পেই কারেম্বুর’ মাঠে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয় দেশের অন্যতম জনদরদী প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতিকে।