বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বিদ্যুৎ ছাড়াই তরতাজা থাকবে খাবার! মাটির ফ্রিজ বানিয়ে চমকে দিলেন ৭০ বছরের এই বৃদ্ধ

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২২, ০৭:৪২ পিএম | আপডেট: জুলাই ১৬, ২০২২, ০২:০৮ এএম

বিদ্যুৎ ছাড়াই তরতাজা থাকবে খাবার! মাটির ফ্রিজ বানিয়ে চমকে দিলেন ৭০ বছরের এই বৃদ্ধ
বিদ্যুৎ ছাড়াই তরতাজা থাকবে খাবার! মাটির ফ্রিজ বানিয়ে চমকে দিলেন ৭০ বছরের এই বৃদ্ধ

প্রচণ্ড গরমে প্রাকৃতিক উপায়ে জল ঠাণ্ডা রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় মাটির তৈরি পাত্র বা কলসি ব্যবহার। বহুকাল ধরেই এর ব্যবহার চলে আসছে। আর এই বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়েই এবার তামিলনাড়ুর এক বৃদ্ধ এমন কাণ্ড ঘটালেন যা দেখলে চোখ কপালে উঠবেই! মাটি দিয়ে তিনি তৈরি করে ফেললেন আস্ত এক ফ্রিজ। যা বিদ্যুৎ ছাড়াই তরতাজা রাখবে দুধ-দই, সবজি সহ নানা খাবার।

তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরের কারুমাথামপট্টির বাসিন্দা এম শিবস্বামীর। ৭০ বছরের বৃদ্ধের মাথায় আচমকাই একদিন বুদ্ধি আসে এক বিশেষ ধরনের মাটির পাত্র তৈরি করার, যেখানে বিদ্যুৎ ছাড়াই টাটকা থাকবে খাবার। যেমন ভাবা তেমনই কাজ! ২০২০ সালে প্রথম বার এই ধরনের পাত্র তৈরি করার কথা মাথায় আসতেই কাজ শুরু করে দেন এই বৃদ্ধ।

এমনিতে সারাজীবন ধরে বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্প করে এসেছেন শিবস্বামী। মাটি দিয়ে কড়া, নানা ধরনের পাত্র, বোতল, জল রাখার জগ ইত্যাদি নানা পণ্য তৈরি করে বিক্রি করাই ছিল তাঁর পেশা। থিরুনিলাকান্দার স্টোর নামে একটি দোকানও রয়েছে তাঁর। প্রায় ৫০ বছর ধরে সেই দোকান চালাচ্ছেন তিনি। তবে এবার নতুন ধরনের এই পাত্র তৈরি করতে যথেষ্ট কসরত করতে হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত শিবস্বামীর হাতেই গড়ে উঠল এমন এক রেফ্রিজারেটর যা বিদ্যুৎ ছাড়াই শাকসবজি বা দুধ-দইয়ের মতো খাবার-দাবার সতেজ রাখতে সক্ষম।

মাটির তৈরি এই রেফ্রিজারেটর দেখতে সিলিন্ডারের মতো। পাত্রটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সামনে রয়েছে একটি কল এবং ভিতরে জল ঢালার জন্য পিছনে রয়েছে একটি মুখ। পাত্রটি এমনভাবে বানানো যে একটি বড় পাত্রের মধ্যে রয়েছে একটি ছোট পাত্র। তার উপরে রয়েছে একটি ঢাকনা। বড় পাত্রটিতে প্রায় ১৫ লিটার জল ধরে। আর এই জলেই ঠান্ডা থাকে ভিতরের ছোট পাত্রটি। আর এই ছোট পাত্রতেই সমস্ত খাবার-দাবার রাখতে পারবেন আপনি।

শিবস্বামী জানিয়েছেন, পাত্রটিতে বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রায় ৪ দিন পর্যন্ত তরতাজা থাকবে সমস্ত শাকসবজি। এমনকি দুধ, দই বা ডিমও টাটকা থাকবে এই পাত্রে। এই ধরনের মাটির পাত্র পরিবেশ ভাল রাখার জন্যও অত্যন্ত কার্যকর বলে দাবি তাঁর। তবে চারদিনের বেশি এই পাত্রে শাকসবজি তাজা রাখা যাবে না। এবং সেগুলি একবারও ব্যবহার না করা অবস্থাতেই তরতাজা থাকবে বলে জানিয়েছেন এই বৃদ্ধ।

শিবস্বামীর তৈরি মাটির এই রেফ্রিজারেটরের দাম ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। আর ইতিমধ্যে ১০০টির বেশি বিক্রিও হয়ে গিয়েছে তা। অধিকাংশ গ্রাহকই এই মাটির ফ্রিজ ব্যবহার করে বেশ খুশি। তবে এত কিছুর পরও শিবস্বামীর আক্ষেপ যে, নতুন প্রজন্মের কেউই আর এই পেশায় আসতে ইচ্ছুক নয়৷ আগে তাঁকে সাহায্যের জন্য ৪ জন থাকলেও ইদানীং সেই সংখ্যা কমে ২ জনে এসে ঠেকেছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই হয়তো মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসবে বলে আশঙ্কা এই বৃদ্ধের।