শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আফগানিস্তানে! উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে বসেছেন মোদী-শাহ-রাজনাথ-অজিত দোভাল

০৮:৪০ পিএম, আগস্ট ১৭, ২০২১

ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আফগানিস্তানে! উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে বসেছেন মোদী-শাহ-রাজনাথ-অজিত দোভাল

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। যত সময় এগোচ্ছে, ততই ক্রমশ খারাপ হচ্ছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। এ যেন এক অন্ধকারময় আফগানিস্তানের ছবি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই গোটা দেশটা আতঙ্কের গহ্বরে চলে গিয়েছে। দেশ ছেড়ে পলায়ন করেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দখল নিয়েছে তালিবানরা। এই পরিস্থিতিতে নিজের দেশকে আর সুরক্ষিত মনে করছেন না আফগানরা। কাবুল বিমানবন্দরে অজস্র মানুষের ভিড়। প্রাণ বাঁচাতে সকলেই উদভ্রান্তের মতো ছুটে চলেছেন। বিমানে ওঠার জন্যও লম্বা লাইন। ইতিমধ্যেই কাবুলে দূতাবাসের সকল ভারতীয় এবং জওয়ানদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সোমবার প্রথম দফায় কাবুল থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয় ৪৫ জন ভারতীয়কে। দ্বিতীয় বিমানটি মঙ্গলবার ফেরে ১২০ জন যাত্রীকে নিয়ে।

এদিকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে চলছে বিশেষ জরুরি বৈঠক। মঙ্গলবার নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটিকে নিয়ে এই বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বৈঠকে উপস্থিত আছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও।

সূত্রের খবর, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতি মুহূর্তে দেশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত কাবুল থেকে বিমানের উড়ান নিয়ে সবরকম খোঁজখবর নেন তিনি। পাশাপাশি ভারতের যে সমস্ত নাগরিক এখনও আফগানিস্তানে আটকে রয়েছেন, তাঁদের কীভাবে সুরক্ষিতভাবে ফেরানো সম্ভব, সে বিষয়েও ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র সরকার।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রবিবারই কাবুল পুরোপুরিভাবে তালিবানিদের কব্জায় চলে যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই কাবুল ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায় মানুষের মধ্যে। এর জেরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। রবিবার সন্ধ্যায় কাবুল বিমানবন্দর থেকে ১২৯ জন যাত্রী নিয়ে দিল্লিতে পৌঁছায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান। সোমবার সেই আতঙ্ক চরমে ওঠে। মানুষ কাবুল ছেড়ে পালানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় বেশ কয়েকটি ভিডিও। এরই মধ্যে একটিতে দেখা গেছে, কাবুল বিমানবন্দরে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়। সবাই কোনওরকমে দেশ ছাড়তে চাইছেন। আর অন্য একটিতে দেখা গেছে, বিমান থেকে মাঝ আকাশে মানুষের পড়ে যাওয়ার ভিডিও।

জানা গিয়েছে, বিমানের পাখায় ছিলেন তাঁরা। কোনক্রমে দেশ ছাড়তে চাইছিলেন। তবে, মাঝ আকাশে বিমান থেকে পড়ে যান। বহু মানুষ বিমানের চাকায় পিষে গিয়েছেন বলেও সূত্রের খবর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরের চরম বিশৃঙ্খলতার ছবি। এদিকে, কাবুল বিমানবন্দরের বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালাতে হয় মার্কিন সেনাকে। এই গুলি চালনার জেরে একাধিক জনের মৃত্যুর খবরও প্রকাশ্যে আসে। আহত হন বেশ কয়েকজন। এরপর কাবুলের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সোমবারই জানিয়েছিলেন যে, গত কয়েক দিন ধরে আফগানিস্তানের কাবুলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। গোটা ব্যাপারটির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে ভারত থেকে কাবুলের উদ্দেশে সি-১৭ গ্লোবমাস্টার যাত্রা করলেও, বিমানবন্দরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় সেখানে নামতে পারেনি। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ তাজিকিস্তানে অবতরণ করানো হয় বিমানটি। মার্কিন সেনা বিমানবন্দরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরই, সে দেশের মাটিতে নামে ভারতীয় বিমান। তবে, এক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়তে হয়। বিমানবন্দরে আসার পথেই তালিবান সমর্থকদের বাধার সম্মুখীন হতে হয় ভারতীয়দের। বিমানবন্দরে প্রবেশ করার আগে ভারতীয়দের হাত থেকে ব্যাগগুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে শেষপর্যন্ত দেশে ফেরে প্রথম বিমানটি। এরপর সেখান থেকে রাতের মধ্যেই ফিরিয়ে আনা হয় ৪৫ জন ভারতীয়কে।

মঙ্গলবার সকালে আরও একটি বিমান কাবুল থেকে ভারতে পৌঁছয়। তাতে ছিলেন ১২০ জন যাত্রী। সেই বিমানটি প্রথমে পৌঁছয় গুজরাটের জামনগরে। সেখান থেকে পরে দিল্লিতে অবতরণ করে। আরও একটি বিমানের আসার কথা রয়েছে। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত কিংবা বুধবার সকালে কাবুল থেকে ভারতে এসে পৌঁছতে পারে সেটি। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর টুইটারে লেখেন, ‘ভারতীয় অ্যাম্বাসাডার ও দূতাবাসের আধিকারিকদের কাবুল থেকে ভারতে ফেরানোটা যথেষ্ট কঠিন ও জটিল ছিল। সকলের সহযোগিতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।’

https://twitter.com/DrSJaishankar/status/1427615839667335174

এদিকে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কাবুলে থাকা ভারতীয় দূতাবাসের সমস্ত কর্মীদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই তাঁরা ভারতে ফিরে আসেন। এছাড়া অন্য যে সকল ভারতীয় নাগরিকেরা এখনও ফিরতে পারেননি, তাঁদের দ্রুত বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে এও বলা হয় যে, সমস্ত নাগরিকদের সুরক্ষাই ভারতের মূল লক্ষ্য। দূতাবাসের কোনও কর্মী কাবুলে আটকে নেই বলে জানানো হয়েছে। তবে, এখনও বেশ কিছু ভারতীয় কাবুলে আটকে রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি জারির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ফোন নম্বর ও মেইল আইডিও শেয়ার করেছে বিদেশমন্ত্রক। ফোন - 91-11-49016783, 91-11-49016784, 91-11-49016785, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর - 91 8010611290। মেল আই ডি- SituationRoom@mea.gov.in

উল্লেখ্য, দেশে ফেরার জন্য করুণ আর্তি জানিয়েছেন ভারতীয়রা। ভারত সরকারও তাঁদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে। এর জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ ই-এমারজেন্সি ভিসা পরিষেবা। যাতে ফাস্ট ট্র্যাকের ভিত্তিতে আফগানিস্তানে আটকে পড়া নাগরিকদের ভিসা দ্রুত মঞ্জুর হয়।

পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে, নতুন এই ভিসা ক্যাটাগরির নাম 'e-Emergency X-Misc Visa'। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করেই, দ্রুত ভিসা মঞ্জুরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতিতে এই e-Emergency X-Misc Visa-র জন্য আবেদন করতে পারবেন আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়রা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে একটি স্পেশাল আফগানিস্তান সেল চালু করা হয়েছে।